Published : Saturday, 16 January, 2021 at 12:00 AM, Update: 16.01.2021 1:33:07 AM
গত সোমবার বিকালে কুমিল্লা নাঙ্গলকোট উপজেলার মক্রবপুর ইউনিয়নের বান
নগর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে বাবা-ছেলে মাহবুবুল-রিসানের পরিবারে এর আগেও
একই ভাবে মারা গেছে ৩ জন। মাহবুবুল হকের ভাই মাদ্রাসা শিক্ষক ছায়েদুল হক
জানান, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর এই ঝুঁকিপূর্ণ রেল পথে মাহবুবুল হকের ভাই
মাস্টার ছায়েদুল হকের ২ বছরের শিশু আনাছ ইবনে সাঈদ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা
যান। দীর্ঘ দিন আগে আগে মাহবুব-ছায়েদুল হকের এক বোনও শিশু বয়সে মারা যায়।
একই গ্রামের মাওলানা আবদুর রশিদের মেয়েও একই এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা
যায়। এছাড়া প্রতিনিয়ত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগী মারা
যাচ্ছে।
ছায়েদুল হক জানান, বান নগর উত্তরপাড়া থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়
পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকায় রেললাইনের পাশ ঘেষেই বাড়িঘর। আমাদের পরিবারের
সদস্যদের ঘর থেকে রেললাইনের দূরত্ব সর্বোচ্চ ২৫ ফুট। এই দূরত্বে সাধারণত
বাড়ি-ঘরের উঠোন থাকে। আর রেললাইনের পার্শ্ববর্তী পরিবারগুলো অস্বচ্ছল, এই
বাড়ি-ঘর ছেড়ে কে কোথায় যাবে- আর চাইলেও কেউ চাইলেও অস্বচ্ছলতার কারনে বেড়া
বা দেয়ালও দিতে পারছেনা। সবশেষ মৃত্যুবরণ করা মাহবুবুল হকও পেশায় একজন
দিনমজুর ছিলেন। তার মৃত্যুতে এই পরিবারটি একদম পথে বসে গিয়েছে।
তিনি
আরো জানান, বান নগর উত্তরপাড়ার ২০টি পরিবারের প্রায় ৫শ মানুষের চলাচলে
পাশের ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের পাশ দিয়েই একমাত্র চলাচলের সড়ক। এছাড়া বাড়ির
খুব পাশেই রেললাইন। সরকারিভাবে যদি রেললাইনের দুই পাশে বেড়া বা যে কোন
প্রতিবন্ধকতার ব্যবস্থা করা হত, তাহলে হুট করেই শিশুরা কিংবা গবাদিপশু
রেললাইনের উপর উঠতে পারতো না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেছে,
উপজেলার মক্রবপুর ইউনিয়নের বান্নগর উত্তর পাড়ার পশ্চিমপাশের ২০টি পরিবারের
প্রায় ৫শ মানুষের ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথ ছাড়া চলাচলের বিকল্প কোন সড়ক নেই।
তাদেরকে প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে রেলপথ দিয়ে পাশের দোকানপাট, মক্রবপুর
বাজার হয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদর এবং লাকসাম হয়ে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন
জেলায় চলাচল করতে হয়। এছাড়া ছোট-ছোট কোমলমতি শিশুদেরকে রেলপথ দিয়ে
ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। গ্রামবাসী ঢাকা-চট্রগ্রাম
ডাবল লাইন রেলপথের মাঝে ধান, গম, ভুট্টা, খড় এবং লাড়কি শুকিয়ে থাকেন। তারা
রেলপথ দিয়ে মোটরসাইকেল এবং সাইকেল পার করেন। এছাড়া হেসাখাল-মক্রবপুর সড়কের
বান্ননগর উত্তর পাড়ার বাতোড়া সড়কের মাথায় একটি অরতি লেভেল ক্রসিং দিয়ে
ছোট-বড় যানবাহনসহ এলাকাবাসী নিয়মিত ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করেন।
লেভেলক্রসিং-এ কোন গেটম্যান নেই।
এলাকাবাসীর দাবি, এই জনবহুল এলাকাটিতে
রেললাইনের পাশে দ্রুত কাটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা। না হয়
দিনের পর দিন এভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
স্থানীয় অধিবাসীরা
উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলেও রেললাইনটিকে সুরক্ষিত করার বিষয়ে
এপর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেও জানায় এলাকাবাসী।