ভারতের "পদ্মশ্রী" পদক পাচ্ছেন দাউদকান্দির কৃতিসন্তান সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক
Published : Wednesday, 27 January, 2021 at 12:00 AM
আলমগীর হোসেন, দাউদকান্দি।।
ভারত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা "পদ্মশ্রী" পদক পাচ্ছেন কুমিল্লার দাউদকান্দির কৃতি সন্তান- বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষক লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সানজিদা খাতুন সম্মানজনক এই পদক পাচ্ছেন। গতকাল সোমবার (২৫ জানুয়ারি ২০২১) ভারতের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করে।মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের জন্ম কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার চশই গ্রামে। জন্ম ১৯৫১ সালের ১১ এপ্রিল। বাবা কাজী আবদুল মুত্তালিব। মা কাজী নূরুন্নাহার বেগম। সাজ্জাদ আলী জহির ১৯৬৯ সালের শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাকুল সামরিক একাডেমিতে সিনিয়র ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণরত ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আগস্ট মাসের শেষে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি সিলেট অঞ্চলে ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনে দ্বিতীয় গোলন্দাজ বাহিনীকে সংগঠিত করেন। আগস্ট মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন লাভ করেন সাজ্জাদ আলী জহির। পোস্টিং হয় ৭৮ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট শিয়ালকোটে। কয়েক দিন পর সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন সেপ্টেম্বর মাসে। এ সময় ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে কয়েকটি ১০৫ এমএম গান দেয়। তা দিয়ে মুক্তিবাহিনীর জন্য একটি ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি গঠন করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় রওশন আরা ব্যাটারি। এই ব্যাটারিতে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। এ গ্রুপের সহঅধিনায়ক ছিলেন তিনি। রওশন আরা ব্যাটারিতে ছিল ছয়টি গান। অক্টোবর মাস থেকে এই ব্যাটারি ১০৫ এমএম কামান দিয়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সকে বিভিন্ন যুদ্ধে আর্টিলারি ফায়ার সাপোর্ট দিয়ে সহায়তা করে। সাজ্জাদ জহিরের পরিচালনায় রওশন আরা ব্যাটারি কয়েকবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে। সঠিক নিশানায় গোলাবর্ষণ করার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন। এর ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন বীর প্রতীক খেতাব। এছাড়াও পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক ২০১৩। সাজ্জাদ আলী জহির একজন গুনী মুক্তিযুদ্ধ গবেষকও। পাঁচজন বীর শ্রেষ্ঠর জীবনীগ্রন্থসহ তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ের সংখ্যা ৫৪টি।