কুর্মিটোলা
জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে
বাংলাদেশে বহু প্রতীতি টিকাদান কার্যক্রম শুরু হল। মহামারীতে মৃত্যু, শোক
আর সঙ্কটের একটি বছর পেরিয়ে এসে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়েই করোনাভাইরাসের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে সরকার আশা করছে।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বুধবার বিকালে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এই টিকাদান
কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে
প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেওয়া দেখেন তিনি।
প্রথম টিকা দেওয়া হয় কুর্মিটোলা
জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে। টিকা নিয়ে
তিনি বলেন ‘জয় বাংলা’। প্রধানমন্ত্রীও তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলান।
এরপর একে
একে টিকা নেন এ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, মতিঝিল
বিভাগের ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মো. দিদারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।
টিকাদান শুরুর আগে দেওয়া বক্তব্যে
সরকারপ্রধান বলেন, “আমি বলব এটা একটা ঐতিহাসিক দিন। কারণ বিশ্বের অনেক দেশ
এখনও শুরু করতে পারেনি। সেখানে আমাদের মত একটি দেশ, ঘনবসতিপূর্ণ দেশৃ সীমিত
অর্থনৈতিক শক্তি নিয়েই আমরা কিন্তু মানুষের কল্যাণে যে আমরা কাজ করি সেটাই
আজকে প্রমাণ হল।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা আসা শুরু হয়েছে, আরও আসবে।
এরপর সারা দেশে টিকা দেওয়া শুরু হবে, যাতে দেশের মানুষ করোনাভাইরাসের
বিরুদ্ধে সুরা পায়।
প্রথম দিন সব মিলিয়ে মোট ২৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে, সে
প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল,
মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে টিকা দেয়ার জন্য
নির্দিষ্ট জায়গায় বুথ তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া টিকা প্রয়োগের পরবর্তী
পর্যবেণ ও কারো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার
ব্যবস্থা রেখেছে হাসপাতালগুলো।
বাংলাদেশে দেওয়া হবে ভারতের সেরাম
ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা, যা
‘নিরাপদ এবং অধিকাংশের েেত্র কার্যকর সুরা দিতে পারে’ বলে কিনিক্যাল
ট্রায়ালে দেখা গেছে। আট সপ্তাহের ব্যবধানে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে
সবাইকে।
সরকার সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, তার
প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ সোমবার দেশে পৌঁছেছে। এছাড়া সেরাম ইনস্টিটিউটে
উৎপাদিত আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ।
এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে বাকি আড়াই কোটি ডোজ দেশে আসার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে
যেহেতু এ টিকার কিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
প্রটোকল অনুযায়ী প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সংখ্যক
ব্যক্তির উপর এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেণ করা হবে।
সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।
সরকার
তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার
পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সম্মুখসারিতে থাকা
কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৩ জনকে প্রথম পর্যায়ে
করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাসের টিকা পেতে আগ্রহী সবাইকেই
নিবন্ধন করতে হবে। সুরা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে
(িি.িংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধনের
কাজটি সারতে হবে।