দেশের
পুরনো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। অনেক রেলপথ ও
স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার রেলওয়েকে নতুন করে গড়ে তুলতে আন্তরিক। নতুন
নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো রেলপথ নতুন করে চালু করা
হচ্ছে। কোনো দিন ট্রেন চলেনি এমন অনেক এলাকায় রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে।
অনেক এলাকায় এরই মধ্যে রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ট্রেন চলাচল শুরুও
হয়েছে। অন্যদিকে একটি চক্রের মাধ্যমে রেলের জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
সারা
দেশে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তির পরিমাণ একেবারে কম নয়। এসব ভূ-সম্পত্তি থেকে
একসময় রেলওয়ের ভালো উপার্জনও হতো। কিন্তু একটি অসাধু চক্র রাজনৈতিক প্রভাব
খাটিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি দখল করে আছে। অনেক জমি চলে গেছে
এই চক্রের সদস্যদের ব্যক্তিমালিকানায়। এসব জমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও
ব্যবহৃত হচ্ছে; কিন্তু বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত
এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনের আশপাশে
রেলের ৫৮ একর জমির মধ্যে অন্তত ১১ একর বেদখল হয়ে গেছে। এসব জমিতে গড়ে
উঠেছে ট্রাকস্ট্যান্ড, বস্তি, বহুতল আবাসিক ভবন, কাবের কার্যালয় ও মাঠ,
ফলের আড়ত। রয়েছে মসজিদ, বিদ্যালয়, মাদরাসা ও মন্দির। প্রকাশিত প্রতিবেদন
থেকে জানা যায়, স্টেশনের পূর্ব পাশে গড়ে ওঠা ট্রাকস্ট্যান্ডের দখলে আছে
সবচেয়ে বেশি জমি। এখানে রেলের জমির পরিমাণ পাঁচ একরের বেশি। এখান থেকে
দখলদাররা প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি জমি দখল
করে গড়ে উঠেছে পাঁচ-ছয়টি বস্তি। এসব বস্তি নিয়ন্ত্রণ করেন মতাসীন দলের
স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এসব বস্তি থেকে ভাড়া হিসেবে নিয়ন্ত্রণকারীরা তুলে
নিচ্ছেন মাসে প্রায় ৯ লাখ টাকা।
শুধু জমি বেহাত হয়েছে, তা নয়। রেলওয়ের
পূর্বাঞ্চলের ১৩টি বিভাগের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ করা বাসাও অন্যদের ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
যাঁদের নামে বাসা বরাদ্দ, তাঁরা ফাঁকা জায়গায় গড়ে তুলছেন টিনের ও টিনশেড
পাকা ঘর; এমনকি ভাড়াটিয়ারাও এ ধরনের ঘর তৈরি করে অন্যদের কাছে ভাড়া
দিচ্ছেন।
সরকারি সম্পত্তি অন্যের দখলে কী করে যায়? রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট
দপ্তর কী করছে? এসব জমি উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে-এটাই আমাদের
প্রত্যাশা।