সারাদেশে
নতুন করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগের প্রথম দিন ১ হাজার ১৫টি কেন্দ্রে টিকা
দেওয়া হবে। টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২ হাজার ৪০২টি দল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, টিকার জন্য নিবন্ধন করা না থাকলেও
কেন্দ্র থেকে কাউকে ফেরত পাঠানো হবে না। কেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা
হবে।
কয়েকশ’ জনকে পরীামূলক প্রয়োগের ১০ দিন পর বাংলাদেশে গণটিকাদান শুরু হচ্ছে রোববার। সকাল ৯টায় তা শুরুর কথা রয়েছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রানেজেকার টিকা দিয়ে বাংলাদেশ শুরু করেছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লড়াই।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ডা.
মো. নাজমুল ইসলাম আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঢাকায় ৫৬টি
স্থানে টিকাদান হবে। সেখানে কাজ করবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২০৬টি দল।
ঢাকার বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৯ স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসব
জায়গায় ২ হাজার ১৯৬টি দল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুজন
স্বাস্থ্যকর্মী এবং দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতিটি দলে চারজন সদস্য
থাকবেন।
ডা. নাজমুল জানান, প্রত্যেকটি দলের স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বোচ্চ
১৫০ জনকে টিকা প্রয়োগ করতে পারবেন। সেেেত্র সব মিলিয়ে প্রথম দিনে ৩ লাখ ২৯
হাজার ৪০০ জন মানুষকে টিকা দেওয়ার সমতা রয়েছে।
তিনি বলেন, “এই সংখ্যাটি
কমবেশি হতে পারে। এসব দল প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করবে। প্রথম দিন সবাই কাজ
করবে, ব্যাপারটি এমন নয়। টার্নআউট কম হলে লোকজন কম কাজ করবে। পুরোপুরি কাজ
থাকলে প্রত্যেকেই জয়েন করবে।”
ডা. নাজমুল জানান, ৭ ফেব্রুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নেওয়ার জন্য কয়েকটি স্থান নির্ধারণ হয়েছে।
সরকারের
মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার
ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নেবেন। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য
সচিবালয় কিনিক এবং সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, আইনজীবীরা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা নিতে পারবেন।ডা. নাজমুল বলেন, এর বাইরেও
সবাই নিজের পছন্দমতো জায়গা থেকে টিকা নিতে পারবেন।
“আমরা জানতে পেরেছি,
এমপি মহোদয়রা উনাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় টিকা নেবেন। এছাড়া যার বাসা
যেখানে, তিনি সেখানে স্লট পেলে সেখানে টিকা দেওয়া হবে।”
রোববার শেখ
রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জাহিদ মালেক টিকা নেবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, নিবন্ধন না করলেও কেন্দ্রে এসে টিকা নিতে পারেন
এমন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এেেত্র টিকা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে জাতীয়
পরিচয়পত্র সঙ্গে আনতে হবে।
টিকাদানের আগে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে না
পারলে টিকাগ্রহীতার সব তথ্য রেখে দেওয়া হবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা পরে তা
ডেটাবেইজে তুলে দেবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিবন্ধন করতে পারেনি, কিন্তু কেন্দ্রে আসছে, তাদের ফেরত দেওয়া যাবে না।
“সেেেত্র
তাদের নিবন্ধন করিয়ে টিকা দেওয়া হবে। যদি নিবন্ধন করতে দেরি হয়, তাহলে
টিকা দেওয়া হবে পরে ডেটা এন্ট্রি করা হবে। আমরা কাউকে ফেরত দেব না।”
তিনি
বলেন, “অনেকের কাছে স্মার্টফোন নেই, অনেকে নিবন্ধন করতে পারবেন না। এ
কারণে চেয়ারম্যান থেকে শুরু মেয়র-এমপিরা থাকবেন। মানুষকে কেন্দ্রে নিয়ে
আসবেন, টিকা দেবেন এবং নিবন্ধন করাবেন।”
টিকা দেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি
প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়ে টিকা নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
“৭ ফেব্রুয়ারি আমরা কার্যক্রমটা রোল আউট
করছি। এখন পর্যন্ত যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে তারা সবাই সুস্থ্য আছে। আমরা
সবাইকে আহ্বান জানাই তারা এসে টিকা নেবেন।”
সরকার দেশের মোট জনসংখ্যার
৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনাভাইরাসের
টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। প্রতিজন জনকে দেওয়া হবে দুই ডোজ টিকা।
জাতীয়ভাবে
কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন ভাগে (ফেইজ) মোট
পাঁচ ধাপে এসব টিকা দেওয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে
থাকা মানুষ প্রাধান্য পাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, জাতীয়ভাবে
কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা খসড়া অনুযায়ী
টিকার সংরণ, বিতরণ হবে। তবে প্রয়োজনে এতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
পরিকল্পনা
অনুযায়ী, প্রথম মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে প্রথম
ধাপে ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরকারের হাতে থাকায় প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ টিকা
দেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার।
প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ দেওযার পরের মাসে ৫০
লাখ ডোজ। পরের মাসে আবার ৬০ লাখ ডোজ, দ্বিতীয় ডোজ মেলানোর জন্য এভাবে
দেওয়া হবে। পরের মাস থেকে আবার ৫০ লাখ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
তবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম পরে বলেন,
আগের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে প্রথম মাসে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে।
সেরাম
ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছে সরকার। প্রথম চালানে
৫০ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। এছাড়া ভারত সরকার উপহার হিসেবে আরও ২০
লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে।
তা দিয়ে শুরু হয়েছে টিকাদান। কেনা টিকার বাইরে জুনের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে সোয়া এক কোটি ডোজ টিকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।