রণবীর
ঘোষ কিংকর: কুমিল্লার চান্দিনায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারছে ফসলি
জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ব্রিকস্ ফিল্ডগুলোতে। কোথাও এক্সিভেটর
দিয়ে, কোথাও ড্রেজিং করে আবার কোথাও কোদাল দিয়ে জমির মাটি কেটে নেওয়ায়
ক্রমশও হৃাস পাচ্ছে আবাদি জমি। দীর্ঘদিন যাবৎ এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলেও
যেন দেখার কেউ নেই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- চান্দিনার পানিপাড়া,
মাইজখার, বদরপুর, মহিচাইল ইউনিয়নের খাটিগড়া, মাধাইয়া ইউনিয়নের কাশিমপুর,
মুরাদপুর, সুহিলপুর ইউনিয়নের সাতগাঁওসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি
থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবধি মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
চান্দিনার
পানিপাড়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান- শুধু দিনেই নয়, রাতেও চলছে মাটি
কাটার হরিলুট। আমাদের এলাকায় ২টি ব্রিক্স ফিল্ড রয়েছে। ওইসব ব্রিকস্
ফিল্ডগুলোর মাটির জোগান দিতে এলাকার ফসলী জমিগুলোর মাটি কেটে মৎস্য
প্রজেক্ট করা হচ্ছে। এতে একদিকে আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে, অপরদিকে,
রাস্তা-খাটগুলোর বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে।
ওই গ্রামের নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান- ফসলি জমি কেটে ব্রিক্স ফিল্ডে মাটি সরবরাহ
করছে এ এলাকার বাসিন্দারা। কেউ লাভের আশায় আবার কেউবা বাধ্য হয়ে জমি থেকে
মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার ওইসব ফসলি জমি গুলোর মাটি কেটে মৎস্য
প্রচেষ্ট করায় সরকারি অর্থায়নে সড়ক ও সড়ক রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করাও হচ্ছে।
তিনি
ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন- ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে মালিকপক্ষ লাভবান হচ্ছে,
ব্রিক্স ফিল্ডে মাটি নিয়ে ব্রিক্স ফিল্ডের মালিক মুনাফা অর্জন করছে। আর
রাস্তা-ঘাট নষ্ট করলে সরকারি অর্থায়নে সংস্কার করা হচ্ছে সড়ক ও সড়ক রক্ষার
বাঁধ।
এদিকে, উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চান্দিনা উপজেলার ১৯
হাজার ৮০৪ হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমি
আবাদি। যা গত ৭ বছরের মধ্যে নতুন ভাবে নির্ণয় করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তবে
স্থানীয় সচেতন মহল জানান- গত ৭ বছরে অন্তত আরও ২-৩ হাজর হেক্টর আবাদি জমির
মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১১ হাজার হেক্টর আবাদি জমি অবশিষ্ট আছে
কিনা তাই এখন মুখ্য বিষয়।
চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি নজরুল
ইসলাম সুমন জানান- ফসলী জমি থেকে এক্সিভেটর (ভেকু), ড্রেজিং করে মাটি কেটে
যেসব সমস্যা সৃষ্টি করছে এসব বিষয়ে আমি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে শুরু করে
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ করেছি কিন্ত কিছুই কাজে আসছে না।
এ
ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. আফরিণা আক্তার জানান-
সম্প্রতি চান্দিনায় ব্যাপক হারে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। তবে এ
বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করবো।
চান্দিনা উপজেলা
নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান- এসব বিষয়ে আমরা নিয়মিত
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করি। তবে উপজেলা কৃষি অফিস এ পর্যন্ত আমাকে কোন
তথ্যই জানায়নি। শীঘ্রই আমি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।