দেশে
করোনা সংক্রমণের ১১ মাস পর গতকাল রোববার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
প্রথম দিন শেষে মোট টিকা পেয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে
টিকা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭১ জন। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক
অধ্যাপক মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ১
হাজার ৫টি হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নিবন্ধিত
ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হয়। শুরুর দিন ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার
প্রস্তুতি রেখেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সারা দেশে ২ হাজার ৪০০টি দল টিকা
দিতে কাজ করেছে। টিকা নেওয়ার জন্য আগে থেকে নিবন্ধন করতে হয়েছিল তাঁদের। এ
ছাড়া টিকাদানকেন্দ্রেও নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। প্রথম দিন টিকা দেওয়ার সময়
গ্রহীতাকে বলে দেওয়া হয় দ্বিতীয় ডোজের তারিখ।
রোববার টিকা নিতে
টিকাকেন্দ্রে আসেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকা নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কোভিড-১৯-এর টিকা নেন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল
করিম।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে
(বিএসএমএমইউ) নিবন্ধিত ব্যক্তিদের রোববার টিকা গ্রহণের তারিখ দেওয়া হয় ১
হাজার ২০০ জনকে। তাঁরা সবাই ভিআইপি ও সম্মুখসারির যোদ্ধা। তাঁদের মধ্য থেকে
টিকা নেন ৫৬০ জন। টিকা নেওয়ার আগে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের খুদে বার্তার
মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
সরকারের কাছে ৭০ লাখ টিকা আছে। এর মধ্যে ২০
লাখ টিকা ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে। বাকি ৫০ লাখ টিকা
সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কিনেছে। এই টিকা ৩৫ লাখ মানুষকে
দেওয়া হচ্ছে। তবে গত শনিবার পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ৪৮
হাজার মানুষ।
এ টিকাদান কত দিন চলতে থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে
পারছেন না সরকারি কর্মকর্তারা। গত মাসে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, প্রতি
মাসে দুই সপ্তাহ ধরে টিকা দেওয়া হবে, সরকারি ছুটির দিন ছাড়া।
টিকাকেন্দ্রে
উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন,
টিকাকেন্দ্রে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের
দিনই টিকা দেওয়া হবে না। কোন দিন টিকা দেওয়া হবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে।
গত
২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি রাজধানীর কুর্মিটোলা
হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওই দিন ২১ জনকে করোনার টিকা
দেওয়া হয়। এর পরদিন রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে ৫৪৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়। গতকাল
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, টিকা নেওয়া ৫৬৭ জনই
সুস্থ আছেন। কারও বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
জনস্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় স্থায়ী সমাধান
এনে দিতে পারে টিকা। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে
ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরু হয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, করোনা থেকে দূরে
থাকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায়
রেখে চলতে হবে।