ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
পদ্মাসেতু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব
Published : Tuesday, 9 February, 2021 at 12:00 AM
আবারও সময় বাড়ছে স্বপ্নের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের’! এবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে।
প্রস্তাব অনুযায়ী সময় বাড়ানো হলে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩০ জুন। এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮৩ শতাংশ।
ইতোমধ্যেই সময় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব জানিয়ে সেতু বিভাগ চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।  
এ চিঠি দেওয়া হয়েছে আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বরাবর।  
কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি হবে না তা নির্ভর করে আইএমইডির সিদ্ধান্তের ওপর। আইএমইডি প্রকল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সময় বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়।
আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির জন্য তারা (বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ) আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা তাদের চিঠিটা চেক করছি। পরে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন নাগাদ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা থাকছে। এর আগেও কয়েকবার প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। প্রথমবার ব্যয় বাড়ানো ছাড়া ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। এরপর দ্বিতীয় বার ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। এবার তৃতীয় দফায় আবারও ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হবে। বর্তমানে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। অবশিষ্ট বাস্তব কাজ সমাপ্ত করতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে এক বছর ডিফেক্ট নটিফিকেশন পিরিয়ডসহ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন বলে মনে করে সেতু বিভাগ। পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবটি পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইএমইডিকে বলা হয়েছে।  
সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের মূল সময় এক বছর বাড়বে। তবে আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। তবে আমরা আরও এক বছর সময় হাতে রাখছি। এটা ডিফেক্ট নটিফিকেশন পিরিয়ড। এই সময়ে আমরা ঠিকাদারকে টাকা পয়সা দেবো না। ঠিকাদার বিনা পয়সায় প্রকল্পের মেইনটেইন করবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কোভিড-১৯  এর কারণে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত দক্ষ জনবল বিশেষ করে বেশ কয়েক জন বিদেশি এক্সপার্ট কাজে যোগ না দেওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জন করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি এবং অসমাপ্ত কাজ বিবেচনায় এনে বলা যায় প্রকল্পের কাজ পূর্ব নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। চলমান কাজের অগ্রগতি বিবেচনায় মূল সেতু ও নদীশাসন কাজসহ প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২২ তারিখে সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যায়। প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির মেয়াদ ৩০ জুন ২০২২ এবং দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ও ঠিকাদারের দেনা পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আরও এক বছর অর্থাৎ ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ  বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির যৌক্তিকতা জানিয়ে সেতু বিভাগ জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেশে শুরু হওয়া কোভিডের কারণে প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়েছে। প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি পরামর্শক এবং চীনা ঠিকাদারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন নিজ নিজ দেশের বিধি-নিষেধের কারণে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কাজের সাইটে আসতে পারেনি। এছাড়া যারা প্রকল্পের সাইটে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে কোভিড ভীতি সঞ্চারিত হওয়ায় প্রকল্পে এর প্রভাব পড়েছে। ফলে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হয়েছে। চলতি বছরে প্রবল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার প্রভাবে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। তীব্র স্রোতের কারণে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ভাঙনের সম্মুখীন হয়। ভাঙনের ফলে ১২৫টি  রোডওয়ে স্ল্যাব এবং ১৯২টি রেলওয়ে স্ট্রিংগার (জধরষধিু ঝঃৎরহমবৎ) নদীগর্ভে চলে যায়। এসব কারণেই মূলত প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
পদ্মাসেতুর মোট দৈর্ঘ্য ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যানটি বসলে পদ্মার বুকে সড়কপথের প্রথম দেড়শ মিটার দৃশ্যমান হয়। এরপর তিন বছর ধরে মোট ৪২টি পিলার বসেছে ৪১টি স্প্যান। বাকি কাজ সম্পন্ন করতেই সময় চেয়েছে সেতু বিভাগ।