তানভীর দিপু / মাসুদ আলম ।।
করোনা
ভাইরাস ভ্যাকসিনেশনের প্রথম দিন গতকাল রবিবার কুমিল্লা জেলায় নিবন্ধিত
ফ্রন্টলাইনারদের মধ্যে ১ হাজার ৯১ জন ভ্যাকসিন (টিকা) গ্রহণ করেছেন। এর
মধ্যে কুমিল্লা নগরীতে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১৯০ জন। দিন শেষে জেলার কোথাও থেকে
ভ্যাকসিন গ্রহণের কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর আসেনি বলে জানিয়েছেন
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান।
গতকাল রবিবার দুপুরে
কুমিল্লা সেনানিবাসের অলিপুর সৈনিক কাবে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমের
উদ্বোধনক করেন কুমিল্লা ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এরিয়া কমান্ডার মেজর
জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর হারুন, এসজিপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি।
উদ্বোধনের পর প্রথমেই করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন তিনি। পরে কর্ণেল স্টাফ
করোনা ভ্যাকসিন নেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে
স্থাপিত করোনা ভ্যাকসিনেশন বুথে প্রথম টিকা নিয়ে শুভ সূচনা করেন কুমিল্লার
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আবুল ফজল মীর নিজেই। একই সঙ্গে তাঁর সহধর্মিনী শেখ
মনিরা নাজনীনও টিকা গ্রহণ করেন। তাঁদের সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান
প্রফেসর মো. আবদুস সালামসহ অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
টিকা নেয়ার পর জেলা
প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত বছরের মার্চ থেকে
বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীই করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হয়। এই অবস্থায় আমরা
ভাবিনি, এত দ্রুত টিকা পাবো। আমরা প্রান্তিক পর্যায়েও টিকা পাচ্ছি। আশা
করছি, এই টিকার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে দ্রুত করোনা নির্মূল হবে। টিকা নেয়ার
পর আমি এবং আমার স্ত্রী অপেক্ষা করে দেখেছি, আমাদের মধ্যে টিকার কোনো
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ’
জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা কুমিল্লায় সময়মতো ভ্যাকসিনেশন শুরু করতে পেরেছি এবং ভ্যাকসিন নিয়েছি। এতে আমরা খুশি।’
সিভিল
সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মানুষ ভ্যাকসিন
নিতে এসেছে। করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে যে গুজব ছিল যে মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আসবে
না, তা উড়ে গেছে। প্রথম ধাপের জন্য টানা ১২ দিন প্রতিটি বুথে নিবন্ধিত
ফ্রন্টলাইনারদের টিকা প্রদান চলবে। প্রতিদিন ৬শ -৭শ জনকে একটি বুথে
ভ্যাকসিন দিতে পারার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়
ছাড়াও একই সাথে কুমিল্লা সিএমএইচ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালহ
বিভিন্ন উপজেলায় ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়। কুমেক
হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিনেশন বুথে টিকা নেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের
অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল আজাদ, কলেজের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন, সদর উপজেলা
পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুলসহ অন্যরা।
এর আগে ৩১ জানুয়ারি
কুমিল্লায় ২ লাখ ৮৮ হাজার ডোজ করোনা ভ্যাকসিন এসে পৌঁছায়। গতকাল ভোরবেলা
উপজেলাসহ বিভিন্ন বুথে ভ্যাকসিন পাঠিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়। কুমিল্লা
থেকে প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১২৫ জনের ভ্যাকসিনেশনের চাহিদা দেয়
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা গেছে, কুমিল্লা সদর হাসপাতালসহ ১৭ উপজেলার
২৪টি কেন্দ্রে উদ্বোধনের প্রথমদিন রবিবার সারা জেলায় নারী ও পুরুষসহ ১
হাজার ৯১ জন ব্যক্তি। এরমধ্যে ৭৮৪ জন পুরুষ এবং ৩০৭জন নারী করোনাভাইরাসের
প্রতিষেধক টিকা নেন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রথম দিন টিকা গ্রহণে পুরুষের
তুলনায় নারীদের আগ্রহ খুবই কম। রবিবার রাতে তথ্যটি নিশ্চিত করে কুমিল্লা
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, কুমিল্লা সদর হাসপাতালসহ
জেলার ১৭ উপজেলার ২৪টি কেন্দ্র প্রথমদিন ১ হাজার ৯১ জন ব্যক্তি টিকা
নিয়েছেন। তবে পুরুষের তুলনায় নারী সংখ্যা কম। আশাকরি আগামী দিনগুলোতে
মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার প্রবণতা বাড়বে। রেজিস্ট্রেশন করে যে আগে আসবেন
তিনিই আগে টিকা নিতে পারবেন। আমরা নানাভাবে মানুষকে টিকা উদ্বুদ্ধ করছি।
জেলা
সিভিল সার্জন ডাক্তার নিয়াতুজ্জামান জানান, কুমিল্লার সদর হাসপাতালসহ
জেলার ২৪টি কেন্দ্রে একযোগে টিকা প্রয়োগ শুরু করেছেন রবিবার। প্রতি কেন্দ্র
১৫০টি টিকা প্রয়োগ করেন রবিবার। এরমধ্যে কুমিল্লা সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে
২০০টি টিকা প্রয়োগ করেন।
তিনি বলেন, কুমিল্লার জন্য প্রাপ্ত ২ লাখ ৮৮ হাজার ডোজ টিকা, ১ লাখ ৪৪ হাজার লোককে দুই ডোজের মাধ্যমে দেয়া হবে।