মানুষের
মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে টিকা গ্রহীতার
সংখ্যা। গণটিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিন গত রবিবার টিকা নিয়েছিলেন ৩১ হাজার
১৬০ জন। সোমবার এই সংখ্যা হয় ৪৬ হাজার ৫০৯ জন, মঙ্গলবার এক লাখ এক হাজার ৮২
জন এবং বুধবার এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৫২ জন। সব মিলিয়ে বুধবার পর্যন্ত টিকা
নিয়েছেন তিন লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৯ জন। তার পরও দেখা গেছে, অনেক কেন্দ্রে তাৎণিক
নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা নিতে আসা বহু মানুষ টিকা না নিয়েই ফিরে গেছেন। এতে
বোঝা যায়, প্রথম দিকে টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভয়ভীতি বা
দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, তা দ্রুত কেটে যাচ্ছে। তার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা যুবলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, এখনো মানুষের মধ্যে টিকা
সম্পর্কে যেটুকু ভয়ভীতি আছে, তা কাটানোর ল্েয তাদের কাজ করতে হবে। যুবলীগের
৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলে বুধবার দুপুরে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই যেন টিকা নেয় সে জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ
করতে হবে।
১৮ বছরের কম বয়সী, গর্ভবতী ও গুরুতর অসুস্থদের বাদ দিলেও দেশে
টিকার আওতায় আসবে প্রায় ১০ কোটি মানুষ। প্রত্যেককে দুই ডোজ হিসাবে মোট ২০
কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ
গড়ার জন্য এই টিকাদান দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। বর্তমানে
এক হাজার ১৫টি কেন্দ্রের দুই হাজার ৪০২টি বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি
বুথে দৈনিক ১৫০ জনকে টিকা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তাতে দৈনিক তিন
লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। এই হারে টিকা দেওয়া হলেও প্রায়
দুই বছর লেগে যাবে সবাইকে টিকা দিতে। অথচ এখনো সব কেন্দ্রে প্রত্যাশিত
সংখ্যার অর্ধেককেও টিকা দেওয়া যাচ্ছে না। তাতে সবাইকে টিকা দিতে প্রায় চার
বছর লেগে যাবে। এতে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য কমে যাবে। তা সত্ত্বেও
গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকে জানা যায়, কেন্দ্রগুলোতে তাৎণিক নিবন্ধন গতকাল
থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তটি
সমর্থনযোগ্য নয়। বরং স্বেচ্ছাসেবক বাড়িয়ে হলেও কেন্দ্রগুলোতে তাৎণিক
নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তদুপরি টিকাদান কেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা
দ্রুত বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে দৈনিক কমপে পাঁচ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া যায়।
টিকা
সংগ্রহের প্রচেষ্টাও আরো জোরদার করা প্রয়োজন। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম
ইনস্টিটিউট মোট তিন কোটি ডোজ টিকা দেবে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া যাবে
আরো প্রায় দুই কোটি ডোজ। তার পরও আমাদের দরকার হবে আরো প্রায় ১৫ কোটি ডোজ।
তাই অন্যান্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা আরো জোরেশোরে চালাতে হবে। একই
সঙ্গে সবাই যেন টিকা নেয় তা নিশ্চিত করতে হবে।