ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
শহীদ মিনার পায় না কুমিল্লার শিশুরা
৬৫% সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সারা দেশে একই নকশা প্রণয়ন প্রকল্প ঝুলে আছে
মাসুদ আলম।।
Published : Saturday, 13 February, 2021 at 12:00 AM, Update: 13.02.2021 12:09:00 AM
শহীদ মিনার পায় না কুমিল্লার শিশুরা
কুমিল্লা জেলার প্রায় ৬৫ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেওয়ার জন্য শহীদ মিনার নেই। ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরেও কুমিল্লা শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণই হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এর কারণ হিে
সবে জানিয়েছে যে, মূলত নকশা সংকটের কারণেই অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা যাচ্ছে না। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সারা দেশের সব শহীদ মিনার একই নকশায় হবে। কিন্তু সেই নকশা প্রণয়নের কাজ এখনও শেষ হয়নি। নকশা শেষ হলেই বাকি শহীদ মিনারগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।
কুমিল্লা জেলায় ২ হাজার ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে মাত্র ৭১৭টিতে। বাকি যে ১ হাজার ৩৮৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশ, কলাগাছ ও কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে তাতেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়েও শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছেন। এতে করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সীমাহীন বেগ পেতে হয়। সেইসাথে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।
বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মরণে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। এই দিন সরকারি ছুটির দিন হলেও দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় খোলা থাকে। ভাষা শহীদদের স্মরণে সর্বস্তরের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরিতে বের হন শহীদ মিনারে ফুল দিতে। আর যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেখানে তৈরি করা হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার। ভাষা শহীদদের স্মরণে বিদ্যালয়গুলোতে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান। কোমলমতি শিার্থী ও শিক সবাই মিলেই পালন করে থাকেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার উদাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ শতাধিক। এই বিদ্যালয়ের শিার্থীরা জানিয়েছে, তাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হয় না।
এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিার্থী মো. জোনাইদ জানায়, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার না থাকায় ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয় না। ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির দিন কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানেই তারা ফুল দেয়।
মুরাদনগর উপজেলার কুলুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থানীয় অভিভাবক মোরশেদা আক্তার জানান, এই বিদ্যালয়ের ভবনটি জরাজীর্ণ। স্কুলের জায়গা দখল করে স্থানীয় একটি চক্র ভবন তৈরি করছে। যার কারণে এই বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠও নেই। শহীদ মিনার বানানোর মতো কোনো জায়গাও এখানে নেই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দেওয়া তথ্যমতে, কুমিল্লা জেলায় ২ হাজার ১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় ৬০টি, লাকসামে ৫৭টি, দেবিদ্বারে ১২৯, মুরাদনগরে ১১২, দাউদকান্দিতে ১২৭, চৌদ্দগ্রামে ১৭, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৯১, বরুড়ায় ১১৮, বুড়িচংয়ে ১২১, চান্দিনায় ৪১, হোমনায় ৬৮, নাঙ্গলকোটে ১৩৮, মেঘনায় ৫৩, মনোহরগঞ্জে ৮৬, তিতাসে ৬২, সদর দক্ষিণে ৬৬ এবং লালমাইয়ে ৪৩Ñ মোট ১ হাজার ৩৮৯টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এর মধ্যে কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসার সাথে একই ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত।
শহীদ মিনার নেই কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কাশই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন জানান, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারির দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা গেলেও ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অজানাই থেকে যায়।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, জেলায় ২ হাজার ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩৮৯টিতেই শহীদ মিনার নেই। বর্তমানে সরকারের নির্দেশে শহীদ মিনার নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। কারণ একই নকশায় দেশের সকল শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। নকশার জন্য কোনো কোনো বিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন শহীদ মিনারের কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে। সারা দেশে একই নকশা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকার শহীদ মিনারের নকশা ঘোষণা করলেই কুমিল্লা জেলার যে সব বিদ্যালয়ে নেই, সেগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।