মো. হাবিবুর রহমান
কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদকাসক্ত বন্ধুর সাথে যেতে বাধাঁ দেওয়ায় স্ত্রীকে বটি দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে স্বামী। ঘটনার সাথে জড়িত দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘাতক স্বামী পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা গ্রামে ওই নির্মম ঘটনা ঘটে।
মামলা ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার শিকার পরমতলা গ্রামের মৃত মনু মিয়ার মেয়ে আখি আক্তারকে (২৮) বিগত ১২ বছর পূর্বে বিয়ে করেন পাশের দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (৩০)। বিয়ের পর থেকেই সুমন মিয়া ঘর জামাই হয়ে স্বশুর বাড়িতে বসবাস করছিল। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আখি আক্তার টের পায় তার স্বামী মাদকাসক্ত। স্বামীকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে স্বজণদের নিয়ে শত চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সে।
এরই মধ্যে তাদের কোল জুড়ে আসে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। কিন্তুু মাদক থেকে ফিরে আসেনি সুমন মিয়া। বরং তার বন্ধু একই গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে সাথে নিয়ে মাদক সেবনে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। শনিবার সন্ধ্যায় আখি আক্তার তার স্বামী সুমন মিয়াকে ওষুধ আনতে বলায় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আখি আক্তারের মা নিজেই মেয়ের জন্য ওষুধ আনতে দোকানে চলে যায়। ঘর খালি পেয়ে মাদকাসক্ত সুমন মিয়া ও তার বন্ধু সাদ্দাম হোসেন সবজি কাটার বটি দা দিয়ে আখি আক্তারের গলা, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই তার নারী-ভূরি বেরিয়ে গেলে আখি আক্তার মাটিতে লুটিয়ে পরে।
এ দিকে তার মা চোর চোর শব্দ শুনে ওষুধ না নিয়েই বাড়িতে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে শুনতে পায় জামাই সুমন মিয়া তার মেয়ে আখি আক্তারকে দা দিয়ে কুপিয়েছে। বাড়িতে গিয়ে ঘরে প্রবেশ করে আখি আক্তারকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে থাকতে দেখে। এ সময় প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার আখি আক্তারকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। শনিবার রাত দেড়টায় চিকিৎসারত অবস্থায় সে মারা যায়।
খবর পেয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী থানার পুলিশ আখি আক্তারকে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। অপর দিকে মুরাদনগর থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘাতক সুমন মিয়াকে দেবিদ্বার ও তার বন্ধু সাদ্দাম হোসেনকে নিজ বাড়ি পরমতলা থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার এসআই আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা রেজা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, বন্ধুর সাথে মাদক সেবনে যেতে না দেওয়ায় সুমন মিয়া তার স্ত্রী আখি আক্তারকে বটি দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনায় বন্ধু সাদ্দাম হোসেন তাকে সহায়তা করে। এ ঘটনায় নিহতের মা খোরশেদা বেগম (৫৫) বাদী হয়ে রোববার বিকেলে মুরাদনগর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন। আটককৃতদের সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।