ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
অগ্নিঝরা মার্চ
Published : Tuesday, 2 March, 2021 at 12:00 AM, Update: 02.03.2021 2:27:15 AM
অগ্নিঝরা মার্চবিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস মার্চ। বাড়তি ইতিহাস হলো মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী শুরুর মাস। এ কারণেই এবারের মার্চ এসেছে অন্যরকম এক তাৎপর্য নিয়ে। বাঙালীর রক্তের দামে কেনা স্বাধীনতার সূর্য পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে; সেই বাংলাদেশ এখন সুবর্ণজয়ন্তীর দুয়ারে। সামনে সোনালি ভবিষ্যতের হাতছানি। আর মাত্র ক’দিন। চলমান মুজিববর্ষের মধ্যেই সামনে এসেছে আগামী ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পূর্তি।
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও এখন যুদ্ধ করছে করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্গে। তার মধ্যেই এবারের মার্চ বাঙালীর জীবনে এসেছে অনন্য সাধারণ এক উদযাপনের উপলক্ষ নিয়ে। যার হাত ধরে একাত্তরে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সেই মহান নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন চলছে গত বছরের মার্চ থেকে। আর এবারের মার্চে তা মিলছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সঙ্গে। দেশের মানুষ নতুন করে শপথ নেবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার।
হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালী তার আত্মপরিচয়ের সন্ধান পায় যে মাসে, তারই নাম মার্চ। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সীমাহীন দেশপ্রেম, তুলনাহীন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অসীম সাহস, দূরদর্শিতা আর দৃঢ় নেতৃত্বে এই পলল ভূখ- একাত্তরের মার্চে এসে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
অগ্নিঝরা মার্চের দ্বিতীয়দিন আজ। মূলত ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকেই বাঙালীর ধারাবাহিক স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষধাপের প্রতিরোধ শুরু। একাত্তরের এইদিনে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক বিক্ষুব্ধ জনপদে। এদিন উড়ানো হয়েছিল মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। এর আগেরদিন ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খান এক ফরমানের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। তার সেই অবৈধ এবং স্বৈরাচারী ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালী জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করা ছাড়া অধিকার আদায়ের আর কোন বিকল্প নেই।
পাকিস্তানী শাসকদের এই মনোভাবের বিস্ফোরণ ঘটেছিল ২ মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্র এদিন বটতলায় এসে জমায়েত হন। বটতলার সমাবেশে ইয়াহিয়ার স্বৈরাচারী ঘোষণার ধিক্কার জানানো হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বটতলার ঐতিহাসিক সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আসম আবদুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি উত্তোলন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস এই পতাকাই বিবেচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আহূত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভা সর্বাত্মকভাবে সফল করার প্রস্তুতি চালায় আওয়ামী লীগ। আর এই জনসভাকে কেন্দ্র করে মুক্তিপাগল বাঙালীর মধ্যে এক অন্য ধরনের গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। পাক হানাদার বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের ললাটেও তখন চিন্তার বলিরেখা। ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধু কী স্বাধীনতার ডাক দেবেন? দিলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে- এ নিয়ে পুরো পাকিস্তানেই তোলপাড় চলছিল।
একদিকে জনসভার প্রস্তুতি, অন্যদিকে গোটা বাংলাদেশেই উত্তাল আন্দোলন-বিক্ষোভে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি বাঙালীর চোখে-মুখে একই প্রত্যাশা- পাকিস্তানী দখলদারদের হটিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনা। আর সেই লক্ষ্য পূরণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালীর দামাল ছেলেরা সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
রবিবার দিবাগত রাত শেষে প্রথম প্রহরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠন ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং আলোর মিছিলের মাধ্যমে অগ্নিঝরা মার্চের মাসব্যাপী কর্মসূচী শুরু করে। ২ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।