জনমনে ডেঙ্গু-আতঙ্ক . দ্রুত ব্যবস্থার আহ্বান সিটি কর্পোরেশনকে
রাশেদুল হাসান ফরহাদ।।
শীতে
উপদ্রব কিছুটা কম থাকলেও গরম বাড়ার সাথে সাথে যেন ‘মশার নগরীতে’ পরিণত
হচ্ছে কুমিল্লা। মশার ‘তা-বে’ দিন-রাত অতিষ্ঠ নগরবাসী। পড়ার টেবিল, ডাইনিং
টেবিল কিংবা অফিসের চেয়ার, কোথাও এক মিনিটও স্বস্তিতে বসা যাচ্ছে না।
বৃষ্টি হলে মশার উপদ্রব আরো বেড়ে যাওয়ার ভয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে
ডেঙ্গু-আতঙ্ক। অথচ মশা নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম
চোখে পড়ছে না কারো। তাই কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দদের আজ
দুশ্চিন্তার শেষ নেই। নিজেদের উদ্বেগ, হতাশা আর ক্ষোভের কথা প্রতিনিয়তই
প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে।
নগরীর
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর অধিকাংশ ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলে
রাখার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জমে থাকা পানিতে বাড়ছে মশার প্রজনন।
এককথায় ড্রেনে জমে থাকা পনিই পরিণত হয়েছে মশা উৎপাদন কেন্দ্রে। শুষ্ক মৌসুম
হওয়ায় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে।
নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে
মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে নগরীর চকবাজার বালুধুম, কাঁশারিপট্টি,
গদারমার কলোনি, মুরাদপুর, কাঁটাবিল, চর্থা, সুজানগর, বিসিক শিল্পনগরীসহ
বিভিন্ন এলাকার খাল ও নালা-নর্দমায় গিজগিজ করছে মশার লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ
মশা।
মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসীর দাবি, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যেন
দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। আর নগরীর বিশিষ্টজনরা বলছেন,
প্রতিবারই গরমকাল এলে কুমিল্লাবাসীকে মশার উপদ্রুব সহ্য করতে হয়। কিন্তু
মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের কার্যকর কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। তারা
কেবল নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ফগার মেশিনের মাধ্যমে ধোঁয়া দিয়েই দায় এড়ানোর
চেষ্টা করে। নগরবাসীর শঙ্কা, সর্বত্র যে হারে মাত্রাতিরিক্ত মশার উৎপাত
শুরু হয়েছেÑ ক’দিন বাদে না তা আবার ডেঙ্গুর মহামারিতে রূপ নেয়।
সচেতন
নাগরিক কমিটি (সনাক), কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘গরম বাড়ার
সাথে সাথে নগরীতে অতিরিক্ত মাত্রায় মশা বেড়েছে। মশার এমন উপদ্রব দেখে মনে
হয় খাগড়াছড়ি থেকে মশা আমদানি করা হয়েছে। মশার জন্য কোথাও বসা যায় না। সিটি
কর্পোরেশন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’ তিনি আরো
বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে ফগার মেশিনের ওষুুধের সাথে ব্লিচিং পাউডারও দেয়া
উচিত। পাশাপাশি নগরীর প্রত্যেক নাগরিককে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
নগরীর
৭নং ওয়ার্ড (বিসিক শিল্পনগরী) এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল ইকবাল বলেন, ‘মশা
যেভাবে বাড়ছে, সেই অনুপাতে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা চোখে পড়ে না। মশার কারণে
আমি রুমের জানালা-দরজা খুলি না। শেষ কবে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা মশার
ওষুধ ছিটাতে এসেছে তা মনে পড়ছে না। ’ তিনি আরো বলেন, ‘নিয়মিত পরিষ্কার না
করায় ড্রেনে পানি জমে থাকে তাই শুষ্ক মৌসুমে মশার কামড় খেতে হয় আর বর্ষা
মৌসুমে বাসায় পানি উঠে যায়।’
নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরাফাত
হোসেন আকবর বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ফগার মেশিন এখন মশা ভয় পায় না। মেশিনে
কোনো ওষুধ থাকে কি না সন্দেহ। কারণ স্প্রে করে যাওয়ার পরেই মশা আরও
শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এটা যদি নিয়মিত করতো তাহলে হয়তো মশা কমতো। মাসে একদিনও
ফগার মেশিনের আওয়াজ শোনা যায় না। ’
এদিকে মশার উৎপাতের বিষয়টি নিয়ে
সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ফেসবুকেও। ব্যক্তিগত পেইজের পাশাাপাশি বিভিন্ন গ্রুপেও উঠে আসছে বিষয়টি।
ফেসবুকে মশাবিষয়ক আলোচনায় অংশ নেয়াদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী বলে
জানা গেছে। করোনাকালে ঘরে বসে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরাই মশার উপদ্রবে
বেশি ভুগছে।
‘ডেসপারেটলি সিকিং কুমিল্লা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে মশার
উপদ্রব নিয়ে নিয়মিত স্ট্যাটাস দিচ্ছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার সচেতন
বাসিন্দারা। আজহারুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘মশার উপদ্রব যে হারে বাড়ছে,
মশার ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা উচিত।’ বিকেল আহমেদ নামে আরেকজন লিখেছেন,
‘সিটি করপোরেশনে কেউ থাকলে দ্রুত মশার ওষুধ ছিটানোর ট্রাই করুন। মশার
যন্ত্রণায় এই শহরে থাকা যাচ্ছে না। সামনে গরম, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। দ্রুত
সমাধান চাই।’ মো: এ অর রাহি লেখেন, ‘গত কয়েকদিন যেভাবে মশার উৎপাত দেখছি,
মনে হচ্ছে আমরা মশাদের সমাজে বসবাস করছি। রাতের বেলার কথা বাদই দিলাম,
দিনেই মশাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আমরা জানতে পারি কি, সিটি করপোরেশন থেকে
কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না?’ এস ডি অভি লিখেন, ‘বাসাবাড়ি থেকে টাউনহল,
কোথাও ১ মিনিট শান্তিতে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। এখনো গরম ভালোভাবে পড়েনি।
তাতেই মশার এই অবস্থা!’
অন্যদিকে, খুদে প্রাণীটির বিরুদ্ধে রীতিমতো
যুদ্ধে নেমেছে নগরবাসী। মশারি, কয়েল, অ্যারোসল স্প্রে, ধূপ, ইলেকট্রিক
ব্যাট, ইলেকট্রিক আলোর ফাঁদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে মশা থেকে বাঁচার চেষ্টা
করছে কুমিল্লাবাসী। অনলাইনে মশা মারার নতুন কোনো যন্ত্র দেখলেই ভালোমন্দ
যাচাই না করে কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তারপরও কিছুতেই কুল কিনারা পাচ্ছেন না
তারা।
নগরীর টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী আবুল বাশার রানা বলেন,
‘মশার কয়েল বা স্প্রে ছাড়া দোকানে এক মিনিটও বসা যায় না। সিটি কর্পোরেশনকে
দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন বলেন, কর্পোরেশন
ইতিমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পদ্মা ওয়েল কোম্পানি থেকে ৬ লক্ষ টাকার মশার
ওষুধ সংগ্রহ করেছে। ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আগামীকাল
থেকে আরো বিস্তৃত পরিসরে অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও মশার ওষুধ ছিটানো হবে।’ এবার
যে ওষুধ নেয়া হয়েছে, অন্যান্যবারের তুলনায় ভালো কাজ করবে বলেও জানান তিনি।