ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সিরিয়ায় এখনও নিখোঁজ কয়েক লাখ মানুষ
Published : Tuesday, 2 March, 2021 at 12:14 PM
সিরিয়ায় এখনও নিখোঁজ কয়েক লাখ মানুষ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ায় এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, সিরিয়ায় গত দশ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় আটক হওয়া লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক এখনো নিখোঁজ। এছাড়া আরও কয়েক হাজার মানুষ হয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বা নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার সময়ই মারা গেছেন। খবর বিবিসির।

দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে নতুন একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হওয়া লোকজন এবং এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বিভিন্ন পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন ‘কল্পনাতীত দুর্ভোগ’ হিসেবে। এর মধ্যে ছিল মাত্র ১১ বছর বয়সী ছেলে ও মেয়েদের ধর্ষণের মতো ঘটনাও।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি এখন ‘জাতীয় ট্রমায়’ পরিণত হয়েছে যার দিকে অবশ্যই দৃষ্টি দেয়া দরকার। ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থা নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয় সেটাই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনো চলছে।

এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ আশি হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সিরিয়া বিষয়ক এই তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৫০ সাক্ষ্য আর আটকের পর একশ’র বেশি ঘটনার উপর ভিত্তি করে। এতে দেখা যায়, সিরিয়ায় সক্রিয় সব পক্ষই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে প্রতিপক্ষকে শাস্তি দেয়ার জন্য।

ওই কমিশনের চেয়ারম্যান পাওলো পিনহেইরো বলেন, সরকারি বাহিনী একতরফাভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের আটক করেছে যা এই সংঘাতের মূল উৎস।

তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র গ্রুপগুলো এবং জাতিসংঘ কর্তৃক চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া ও একই ধরণের জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে।

আগে আটক ছিলেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন তারা মাসের পর মাস দিনের আলো দেখেননি, নোংরা পানি পানে বাধ্য হয়েছেন, খেয়েছেন বাসি খাবার এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সেলে তাদের রাখা হয়েছিল। এসব সেলে টয়লেট সুবিধা যেমন ছিল না, তেমনি ছিল না কোনো চিকিৎসা সুবিধাও।

সরকারি কারাগারগুলোতে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য অন্তত ২০টি উপায়ে সেখানে নির্যাতন করা হতো। এর মধ্যে ছিলো ইলেকট্রিক শক দেয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেয়া, নখ ও দাঁত উপড়ে ফেলা এবং দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা।

হোমস শহরে আটক হওয়া এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়কার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘প্রথমে আমাকে নির্যাতন করলো। তারপর বললো, আমরা তোমাকে এখনো এখনি মেরে ফেলতে পারি, কেউ জানতেই পারবে না।

নির্যাতনের শিকার হয়েও ফিরে আসা ব্যক্তিরা বর্ণনা দিয়েছেন কিভাবে তাদের শরীর জুড়ে ব্যথার সাথে এখনো লড়াই করছেন তারা যা পরে মানসিক ট্রমায় রূপ নিয়েছে।

হোমস ও দামেস্কে সামরিক হেফাজতে নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এমন এক নারী বলেন, ‘আমার অবস্থা এখন এমন যে, আমি ডায়াপার ছাড়া থাকতে পারি না। পুরো শরীরে মারাত্মক ব্যথা। আমার আসলে আর কোনো আশাই নেই। জীবনটা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।’

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হায়াত তাহরির আল শাম পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে যাদের আটক রাখা হয়েছিল তাদেরকেও অত্যাচার করা হত। এই কথিত জিহাদিরা এখন বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ ঘাঁটিটি নিয়ন্ত্রণ করছে। বহু পুরুষ জানিয়েছেন যে, তাদের নগ্ন করে ইলেকট্রিক শক দেয়া, এমনকি ধর্ষণও করা হয়েছিল।

নারী বন্দীরা জানিয়েছেন, তাদের প্রায়ই ধর্ষণের হুমকি দেয়া হতো এবং হামা চেকপয়েন্টে একজন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের জানানো হয়েছে যে, বিচার ছাড়াই সামরিক আদালত বা বিকল্প আদালতে বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের নামে অনেক আটক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আটক অবস্থায় কত মানুষ মারা গেছে তার কোনো হিসেব নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে সরকারি হেফাজতেই।

বেশ কিছু সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের বিভিন্ন গণকবরে দাফন করা হয়েছে যার অন্তত দু’টি দামেস্কের শহরতলীতেই। তবে সরকার ও হায়াত তাহরির আল শাম বন্দীদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পাওলো পিনহেইরো বলেন, ‘পরিবারের লাখ লাখ সদস্যের জানার অধিকার আছে যে, তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কি ঘটেছে। এটি একটি ন্যাশনাল ট্রমা যার দিকে সব পক্ষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরিভাবে দৃষ্টি দেয়া উচিত।’

জাতিসংঘের এই কমিশন সব দেশকে অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার আহবান জানিয়েছে এবং গত সপ্তাহে জার্মানির একটি আদালতের রায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যেখানে সিরিয়ার একজন সাবেক কর্মকর্তা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছেন।