ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
৭৫ শয্যার কুমিল্লা কারা হাসপাতাল
চিকিৎসক আছে, সেবা নাই
Published : Friday, 5 March, 2021 at 12:00 AM, Update: 05.03.2021 12:38:23 AM
চিকিৎসক আছে, সেবা নাইমাসুদ আলম:
   কোনো কয়েদি বা হাজতি অসুস্থ হয়ে পড়লে কুমিল্লা কারা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পান না। অথচ এই হাসপাতালে কোনো জনবল সংকট নেই। দুইজন চিকিৎসক, একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন টেকনিশিয়ান নিয়মিত চাকরি করছেন এবং বেতন-ভাতাসহ সব রকমের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও কুমিল্লা কারাগারে বন্দি অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়া হাজতিরা যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। একই ধরনের অভিযোগ করছেন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিরাও। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানিয়েছেন, এই কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৭৪২। তার বিপরীতে কারা হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা মাত্র ৭৫টি। এই মুহূর্তে কারা হাসপাতালে কোনো ভিআইপি বন্দিও রোগী হিসেবে ভর্তি নেই।
কারাবন্দি ও কয়েদিদের অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে কথা হয় সদ্য জেল খেটে বের হওয়া, জামিনপ্রাপ্ত এবং এ রকম কয়েকজনের স্বজনদের সাথে। কিন্তু কেউই নিজের নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি নন। তাদেরই একজন প্রতিবেশীর দায়ের করা এক মামলায় ২৭ দিন জেল খেটে জামিনে বের হয়েছেন। তিনি জানালেন জেলখানার হাসপাতালের নানা অনিয়মের কথা। বললেন, বন্দি অবস্থায় তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। সপ্তাহখানেক অসুস্থ অবস্থায় দিন পার করলেও হাসপাতালের কোনো চিকিৎসাসেবা তার জোটেনি। কিন্তু অনেককে আবার সুস্থ থেকেও টাকার বিনিময়ে কারাগারের হাসপাতালে থাকতে দেখেছেন। আর সত্যিকারের অসুস্থ কয়েদি-হাজতিরা ঘুষ দিতে পারেন না বলে হাসপাতালের বেডের সুযোগ-সুবিধা পান না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরেক সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির অভিযোগ, অসুস্থ হওয়ার পর একজন কয়েদির অবস্থা গুরুত্বর না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের সেবা মেলে না। তিনি বলেন, হাসপাতালে দায়িত্বরতদের মানসিকতার পরিবর্তন না করলে সাধারণ কয়েদিরা চিকিৎসা সেবা পাবে না।  
মুরাদনগর উপজেলার মাদক মামলায় এক কারাবন্দির স্বজন বলেন, শুনেছেন, তার আত্মিয় এখন মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জেলখানায়। হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু টাকার জন্য পারছেন না। তিনি নিজেও সকাল থেকে অপেক্ষায় আছেন বন্দি স্বজনের সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।
কুমিল্লা কোর্টের একাধিক আইনজীবী বলেন, তাদের অনেক মক্কেল প্রায়ই অভিযোগ করেন, বন্দি অবস্থায় তাদের স্বজনরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষ থেকে যথাযথ চিকিৎসা পান না। কারা হাসপাতালের সেবা পেতে অতিরিক্ত ফি গুনতে হয়। তারা আরও বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে আমাদের পরামর্শ থাকবেÑ কারা কর্তৃপক্ষ যেন কেবল অসুস্থ বন্দিকেই কারা হাসপাতালে সেবা দেন, কোনো সুস্থ বন্দিকে নয়।
অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ৭৫ শয্যাবিশিষ্ট কুমিল্লা কারা হাসপাতালে মঙ্গলবার ভর্তি ছিলেন ৪৫ জন। বাকি ৩০টি শয্যা খালি। একজন কারাবন্দি অসুস্থ হতেই পারেন। তবে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার উপযুক্ত হলে অবশ্যই তাকে কারা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তবে কোনো সুস্থ কারাবন্দিকে হাসপাতালের সেবা দেয়া হয় না।