Published : Saturday, 6 March, 2021 at 12:00 AM, Update: 06.03.2021 1:38:17 AM
বিশেষ
প্রতিনিধি ॥ স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানী হানাদাররা।
অন্যদিকে যে কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে অটুটবন্ধনে বীর
বাঙালিরা। সভা, মিছিল, কার্ফু ভঙ্গ, গুলিতে বাঙালি হত্যা- সব মিলিয়ে
অগ্নিগর্ভ সময়, বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি। উনিশ শ’ একাত্তর সালের ৬ মার্চেও
বঙ্গবন্ধুর ডাকে ছিল হরতাল। সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন একাত্তরের এ
দিন দুপুরে। তার পুরো ভাষণই ছিল মুক্তিকামী বীর বাঙালিদের উদ্দেশ্যে করে
হুমকি ও ধমক। ছিল পাকি সামরিক বাহিনী দিয়ে বাঙালিকে শায়েস্তা করার হুমকি।
স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানী সামরিক হানাদাররা। অন্যদিকে যে
কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে অটুটবন্ধনে বীর বাঙালি।
‘বাংলার
মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত’- বেপরোয়া বাঙালি তখন স্বাধীনতার
স্বপ্নে যেমন উদ্দীপ্ত; তেমনি ফুঁসছিল বিদ্রোহ, বিােভ ও ঘৃণায়। পরদিন ৭
মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন বাঙালীর মুক্তির দিশারী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণে তিনি কী বলবেন? বহুল আকাক্সিত
স্বাধীনতার ঘোষণা তার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হবে কি? এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার
অন্ত ছিল না সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীর মধ্যে। তেমনি দিশেহারা অবস্থা পাকিস্তানী
হানাদারদেরও।
একাত্তরের পহেলা মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মানুষের
আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচী ৭ মার্চ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের একদিন আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার
হুমকি-ধমকি স্বাধীনতাকামী বাঙালীকে হতাশ, ুব্ধ ও উত্তেজিত করে তোলে।
এমনিতেই
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলন চলছে। পাকি
প্রেসিডেন্টের ভাষণের পর তা নতুন মাত্রা পায়। ঘর থেকে রাজপথে নেমে আসে
বিুব্ধ হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী বাঙালী। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর অধির
অপো-দৃষ্টি রেসকোর্সের ময়দানে আয়োজিত জনসভার দিকে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর
অধির অপো-দৃষ্টি রেসকোর্সের ময়দানে আয়োজিত জনসভার দিকে।
এদিকে অগ্নিগর্ভ
মার্চে বাঙালীর প্রবল আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানী সামরিক
জান্তারা। কীভাবে বাঙালীর এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা যায় সে ব্যাপারে
নীলনক্সা করতে থাকে সামরিক জান্তা ও তাদের এদেশীয় দোসররা।
বিশ্বের কাছে
স্বাধীনতার জন্য বাঙালীর এই বাঁধভাঙ্গা আন্দোলন-সংগ্রামের খবর যাতে
কোনভাবেই যেতে না পারে সেজন্য তৎপর হয়ে উঠে পাকি জেনারেলরা। শুধু সেন্সরশিপ
আরোপই নয়, কোনভাবেই যাতে বাঙালীর আন্দোলন-সংগ্রামের খবর না ছাপা হয় সেজন্য
প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন বা স্ব-শরীরে গিয়ে হুমকি-ধমকিও দেয়া হয়।
বাঙালী
জাতির এমনই আন্দোলনের-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছিল প্রাণঘাতী
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। প্রশিতি পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করে বীর
বাঙালীরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল
মহামূল্যবান স্বাধীনতা। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি তাই
নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছে দেশমাতৃকার জন্য আত্মৎসর্গকারী বীর
মুক্তিযোদ্ধাদের।
বাঙালীর জীবনে এবারের মার্চ মাস এসেছে এক অন্যরকম
পরিস্থিতিতে। মুজিববর্ষের পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর যুগ সন্ধিণের
সামনে পুরো দেশের মানুষ। একাত্তরের মতোই স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষদাঁত ভেঙ্গে
দিতে জেগে উঠেছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। শুরু করেছে রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ
বিনির্মাণে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেও বিজয়ী হতে দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ তরুণ প্রজন্ম।