বিশেষ
প্রতিনিধি ॥ ‘বন্ধু তোমার ছাড়ো উদ্বেগ, সুতীè করো চিত্ত/ বাংলার মাটি
দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত’। ১১ মার্চ, ১৯৭১। অগ্নিবিদ্রোহে টালমাটাল
পুরো দেশ। কবির এই উজ্জীবনীমন্ত্রে দীপ্ত জাতি প্রতিবাদে, প্রতিরোধে তখন
মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। স্বাধীনতার আন্দোলন ক্রমেই
উত্তাল থেকে উত্তালতর হতে থাকে। শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন সফল হওয়ায়
বঙ্গবন্ধুর ওপর দেশবাসীর আস্থা বেড়ে যায় শতগুণ।
পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক
শাসন-শোষণ, নিপীড়ন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অগ্নিবিদ্রোহের চূড়ান্ত রণপ্রস্তুতি
চলছিল একাত্তরের এই সময়টায় বাঙালী জাতির মুখ্য চিন্তা ও ল্য তখন একটাই ছিল-
‘স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ’। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অনেক আগেই
পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
একমাত্র ছেনা ছাউনি
ছাড়া টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া কোথাও পাকিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। পুরো দেশ,
মানুষ চলছিল একমাত্র এক ব্যক্তির নির্দেশে, তিনি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ও সামরিকজান্তার রক্তচু এবং
আদেশ উপো করেই সব দোকানপাট, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, কোর্ট-কাচারি বন্ধ
রাখা হয়।
দেশজুড়ে চলতে থাকে মিটিং-মিছিল। সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা আরও
জোরালো হয়। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় দল গঠনের কাজ চলতে থাকে। শহরগুলোতে
প্রতিদিনই মিছিল-মিটিং চলতে থাকে। পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন অনেকে। বাড়তে
থাকে শহীদদের তালিকা। একেকটি মৃত্যু বীর বাঙালীর রক্তে প্রতিশোধের ইচ্ছাকে
আরও বাড়িয়ে তোলে। চারদিক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। দেশের স্বাধীনতা আনতে
অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে সবাই প্রস্তুত।
একাত্তরের এই দিনে ছাত্র ইউনিয়ন
দেশবাসীকে সংগঠিত করতে একটি লিফলেট ছাড়ে। সেখানে তারা পাকহানাদারদের হাত
থেকে দেশকে রা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়। এভাবে একেকটি দিন
যেতে থাকে আর বাড়তে থাকে উত্তেজনা। সংঘবদ্ধ হতে থাকে বাঙালী। বাড়তে থাকে
বাঙালীর মনের জোর।
অনিবার্য স্বাধীনতার দিকে দেশ যাচ্ছে। পূর্ব
পাকিস্তান হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এটা বুঝতে পেরে পাক সামরিকজান্তারা গোপনে
বাঙালী নিধনে ঘৃণ্য খেলায় মেতে ওঠে। যে কোন মূল্যে স্বাধীনতা ঠেকাতে পাকি
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালীর রক্তের হোলি খেলার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। গোপনে
পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানী সামরিক শক্তি ও অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ করতে থাকে।
কিন্তু
এই ঘৃণ্য পরিকল্পনার কথা সামরিক বাঙালী অফিসাররা জানতে পেরে তাঁরাও ভেতরে
ভেতরে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে শক্তি-সাহস সঞ্চয় করতে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত
সেনা-নৌ-পুলিশের বাঙালী অফিসার-সৈনিকরা সারাদেশেই মুক্তিপাগল বীর বাঙালীদের
গোপনে সশস্ত্র প্রশিণ দিতে থাকে।
অন্যদিকে আগের মতোই উত্তাল জনতা
মিটিং-মিছিলে প্রকম্পিত করে রাখে সারাদেশ। ুব্ধ বাঙালীর মিছিলে মিছিলে
ঝাঁজালো স্লোগানে উচ্চকিত ছিল সারাদেশ। প্রধান স্লোগান ছিল- ‘বীর বাঙালি
অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা,
পদ্ম-মেঘনা-যমুনা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ইত্যাদি।