বাংলাদেশের লিজেন্ডদের তুলোধুনো করে ৯৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন শ্রীলংকার সাবেক তারকা উপুল থারাঙ্গা।
তার এই বিধ্বংসী ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪২ রানে জয় পেয়েছে শ্রীলংকা লিজেন্ডস।
এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচ হারল বাংলাদেশের সাবেকরা। থারাঙ্গা থেকে অবশ্য এমন ইনিংস আশা করতেই পারে লংকানসমর্থকরা। কারণ নামের আগে সাবেক জুড়ে দিলেও ব্যাট এখনও উত্তপ্তই আছে থারাঙ্গার। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে অবসরে গেলেন এই লংকান ব্যাটসম্যান।
ভারতের রায়পুরে রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে বুধবার রাতে শ্রীলংকা লিজেন্ডদের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ লিজেন্ডস।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলংকা। বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুটা দুর্দান্ত হয়নি তাদের।
তিলকারত্নে দিলশান ও সনাৎ জয়াসুরিয়া প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ২৯ রান জমা করেন স্কোরবোর্ডে। পাওয়ার প্লেতে কিপটে বোলিং করেন মোহাম্মদ শরীফ। ২ ওভার হাত ঘুরিয়ে দেন মাত্র ৯ রান।
এরপর অলরাউন্ডার রাজিন সালেহর স্পেলে হাত খুলে খেলা শুরু করেন দিলশান। যদিও বেশি দূর যেতে পারেননি দুই ওপেনার। টানা দুটি বাউন্ডারির পর রাজিনের অফস্পিনে এলবিডব্লিউ হন দিলশান। এর আগে মাত্র ২৩ বলে ৩৩ রান করে ফেলেন।
চোট পেয়ে ১১ বলে ৪ রান করে মাঠ ছাড়েন জয়সুরিয়া। এরপর থারাঙ্গা ও চামারা সিলভার জুটি এগিয়ে নেয় লংকানদের।
শুরুতে দুই বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও অধিনায়ক মোহাম্মদ রফিক দারুণ বোলিং করে রানের গতি আটকে রাখতে পেরেছিলেন।
কিন্তু থারাঙ্গার চওড়া ব্যাটিংয়ে সেই ধকল সহজেই সামাল দেয় লংকানরা। একটা সময় ১০ ওভারে ৭০ রান যোগ করে শ্রীলংকা। রাজিন সালেহের সাধারণমানের বলকে পেয়ে বসেন থারাঙ্গা। খেলেন এক টর্নেডো ইনিংস। থারাঙ্গার তাণ্ডবে শেষ ৪ ওভারে আসে ৬১ রান!
বোলার আলমগীর কবির ও মুশফিকুর রহমান বাবুকেও কচুকাটা করেছেন থারাঙ্গা। আলমগীর কবিরের এক ওভারে ২০ রান নেন থারাঙ্গা। শেষ ওভারে মুশফিকুর রহমানের ওভারে ২ ছক্কা ও ১ চার হাঁকান।
সেঞ্চুরির জন্য শেষ বলে ২ রান দরকার ছিল থারাঙ্গার। সিঙ্গেল নিতে পারলেও দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান সঙ্গী নুয়ান কুলাসেকেরা।
১১ চার ও ৫ ছক্কায় ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় থারাঙ্গাকে।
সেঞ্চুরি না পেলেও দলকে ২০ ওভারে ১৮০ রানের বড় সংগ্রহ এনে দেন থারাঙ্গা।
বাংলাদেশ রান তাড়ায় শুরুটা দারুণ করলেও পরে পথ হারিয়ে ফেলে। নাজিমউদ্দিন ও মেহরাব হোসেন পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে দলকে এনে দেন ৫৪ রান।
লংকান অধিনায়ক দিলশান জুটি ভাঙেন। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅন সীমানায় ধরা পড়েন মেহরাব। শেষ হয় তার ২৭ রানের ইনিংস।
তবে ঠিকই ফিফটির দেখা পান ওপেনার নাজিমউদ্দিন। প্রথম ম্যাচে ১ রানের জন্য ফিফটি ছুঁতে না পারেননি তিনি। এবার করেন ৪১ বলে ৫৪ রান।
দিলশানকে ছক্কা মেরে ৩৪ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করেন নাজিমউদ্দিন। পরে ইনিংসটা খুব একটা বড় করতে পারেননি। আর ৪ রান যোগ করেই বিদায় নিতে হয়।
এরপর ৯ বলে ২ করে দিলশানের বলে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে আউট হন হান্নান সরকার। মোহাম্মদ রফিক ১০ বলে করেন মাত্র ৪ রান। তাকেও আউট করেন দিলশান।
শেষ দিকে খালেদ মাসুদের ২২ বলে অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংসটা ছিল উপভোগ্য।
কিন্তু তা আর জয় এনে দেওয়ার জন্য যথষ্ট ছিল না। ১৩৮ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ ৪২ রানে জয় পেল শ্রীলংকা।
এই হারের আগে ভারত ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ লিজেন্ডস। সবমিলিয়ে সিরিজে তৃতীয় হারের স্বাদ নিল বাংলাদেশ লিজেন্ডস।
শেষ দুই ম্যাচে শুক্রবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ লিজেন্ডস, সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকা লিজেন্ডস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলংকা লিজেন্ডস : ২০ ওভারে ১৮০/৬ ( তিলকারত্নে দিলশান ৩৩, সনাৎ জয়াসুরিয়া ৪ (আহত অবসর), উপুল থারাঙ্গা ৯৯*, চামারা সিলভা ২৪, ফারভিজ মাহারুফ ১২, দুলাঞ্জনা বিজেসিংহে ০, রাসেল আর্নল্ড ১, কুলাসেকারা ১; মোহাম্মদ শরীফ ৪-০-৩০-১, আলমগীর কবির ৪-০-৩৬-০, আব্দুর রাজ্জাক ৪-০-২১-০, রাজিন সালেহ ৪-০-৪৮-১, মোহাম্মদ রফিক ৪-০-২৪-১, মুশফিকুর রহমান ১-০-২০-০)।
বাংলাদেশ লিজেন্ডস: ২০ ওভারে ১৩৮/৬ (নাজিমউদ্দিন ৫৪, মেহরাব হোসেন ২৭, হান্নান সরকার ২, মোহাম্মদ রফিক ৪, মুশফিকুর রহমান ৫, খালেদ মাসুদ ২৮*, রাজিন সালেহ ৫, জাভেদ ওমর ২*, নুয়ান কুলাসেকারা ২-০-১৭-০, দাম্মিকা প্রসাদ ৪-০-২২-২, থিলান তুষারা ৪-০-৩২-০, ফারভিজ মাহারুফ ৪-০-১৫-০, তিলকরত্নে দিলশান ৪-০-২১-৩, রাসেল আর্নল্ড ২-০-২৪-১)।
ফল: শ্রীলংকা লিজেন্ডস ৪২ রানে জয়ী।ম্যান অব দ্য ম্যাচ: উপুল থারাঙ্গা।