মুজিববর্ষে রাবেয়া-রোকেয়ার ঘরে ফেরা সবার জন্য গর্বের: প্রধানমন্ত্রী
Published : Sunday, 14 March, 2021 at 7:46 PM
মুজিববর্ষে সংযুক্ত মাথার যমজ বোন রাবেয়া-রোকেয়াকে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করে তাদের সুস্থ শরীরে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে রাবেয়া-রোকেয়া বাড়ি ফিরে যাবে, তাদের মা-বাবার কোলে হেসে খেলে বেড়াবে এটা সত্যি খুব বড় পাওয়া। যেখানে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, ঠিক এই সময়ে এত বড় একটা সফল অস্ত্রপচার করা এবং সফলতা অর্জন করা এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বিরাট অর্জন।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষে জোড়া মাথা থেকে মুক্তি পাওয়া রাবেয়া-রোকেয়ার শুভ গৃহ প্রত্যাবর্তন সবার জন্য আনন্দের এবং গর্বের।
প্রধানমন্ত্রী রোববার দুপুরে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জোড়া মাথা থেকে মুক্তি পাওয়া রাবেয়া-রোকেয়ার গৃহ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দীর্ঘ চিকিৎসায় জোড়া মাথা আলাদা হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি গেল পাবনার দুই বোন রাবেয়া-রোকেয়া।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসে সিএমএইচের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এই মাসে (মার্চ) বাঙালির ইতিহাসে অনেক কিছু ঘটেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী যমজ শিশুদের জিজ্ঞেস করেন তারা কেমন আছে। উত্তরে বাচ্চাদের একজন জানায়, সে ভালো আছে এবং সে প্রধানমন্ত্রীকে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করে। প্রধানমন্ত্রী জবাব দেন তিনিও ভালো আছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ছোটবোন শেখ রেহানা তাকে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখিয়ে যমজ শিশুদের সম্পর্কে অবহিত করার পরে তিনি ওই শিশুদের চিকিৎসার উদ্যোগ নেন। রাবেয়া-রোকেয়ার মতো যমজকে পৃথক করার মতো এক বড় অপারেশন বাংলাদেশে করার কারণ হলো, এখনকার চিকিৎসক এবং টেকশিয়ানদের একটা অভিজ্ঞতা হবে। ৪৮টি অপারেশন এবং ৩৬ ঘণ্টা ধরে অপারেশন করা, এটা বিরাট ব্যাপার। হাঙ্গেরি থেকে আসা চিকিৎসকদের দলটি এখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করে অপারেশনটা করেছে। আর সব থেকে ভালো লেগেছে এরা প্রত্যেকেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি সবার কাজের আন্তরিকতার প্রশংসা করে বলেন, প্রত্যেকেই এত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন যে, এটা আমি ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শী যারা, তাদেরকেই একত্রিত করা হয়েছে। যাতে কোনো রকম ফাঁক না থাকে। সব যেন ঠিকমতো হয়। কারণ এটা একটা জটিল অপারেশন ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাবেয়া এবং রোকেয়া জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ক্রেনিয় পেগাজ’। এ ধরনের ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা গেলেও আমাদের দেশে এটি পৃথক করার ঘটনা সম্পূর্ণ নতুন। সেটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারায় সংশ্লিষ্ট সবাইকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
সিএমএইচ কর্তৃপক্ষদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, সিএমএইচে দীর্ঘদিন অপারেশন এবং রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা-মাকে সেখানে রাখা এবং এত বড় একটা অপারেশন করাটা একটা অত্যন্ত মানবিক কাজ, যা আপনারা করেছেন।
তিনি রাবেয়া-রোকেয়ার জন্য সবার দোয়া কামনা করে বলেন, আমি দেশবাসীরও দোয়া চাই তারা যেন সুস্থ থাকে, ভালো থাকে এবং বাবা-মায়ের মুখে আনন্দ নিয়ে আসতে পারে।
২০১৯ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এ দিনেই সিএমএইচ ঢাকায় জোড়া মাথা পৃথকীকরণের জটিল অপারেশনটি শুরু হয়। হাঙ্গেরি সরকারের সহযোগিতায় ‘একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশন’-এর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাঙ্গেরিতে ছোট-বড় ৪৮টি অপারেশন সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে শিশু দু’টিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এই অপারেশনের সবচেয়ে জটিল অংশ যমজ-মস্তিস্ক আলাদাকরণের কাজটি সিএমএইচ ঢাকায় সম্পন্ন করা হয়। এ ধরনের অপারেশন সারা বিশ্বেই বিরল এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। অপারেশন পরবর্তী সাফল্যও বিশ্বে খুব বেশি নেই।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
২০১৬ সালের ১৬ জুলাই রাবেয়া এবং রোকেয়া এই যমজ দুই বোন সংযুক্ত মাথা নিয়ে পাবনার স্কুল শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম এবং তাসলিমা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করে।