শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলায় ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও অপর চার আসামিকে যাবজ্জীবন ও তিনজনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। রবিবার (২১ মার্চ) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন এই রায় ঘোষণা করেন।
শরীয়তপুরের ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাদীপক্ষ। রায় ঘোষণা পর সব আসামির মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হাবীবুর রহমানের ছেলে শরীয়তপুরের বর্তমান মেয়র পারভেজ রহমানের সমর্থকেরা। তারা বেলা আড়াইটা থেকে টানা দেড় ঘণ্টা মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন শহীদ কোতোয়াল, শাহিন কোতোয়াল, শফিক কোতোয়াল, সলেমান সরদার, মজিবর রহমান তালুকদার ও শহীদ তালুকদার। এছাড়া সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, ডাব্লিউ তালুকদার, আবদুর রশিদ ওরফে টোকাই রশিদ এবং বাবুল খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার ও জাকির হোসেনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় ৫২ আসামির মধ্যে ৩৯ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর জজ কোর্টের পিপি মীর্জা মো. হযরত আলী জানিয়েছেন, আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত শহীদ তালুকদার, শাহীন কোতোয়াল এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাবুল তালুকদার, আবদুর রশিদ ও দুই বছর কারাদণ্ড পাওয়া জাকির হোসেন পলাতক। বাবুল তালুকদার ঘটনার সময়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ছিলেন। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া বাবুল খান ছিলেন ওই সময়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি।
মামলার এজাহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা ও সমর্থন নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। ওই মেয়াদে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। নির্বাচনে আওরঙ্গের পক্ষে ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। ওই নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাবীবুর রহমান ও তার ভাই পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন ছিলেন মোবারক আলী সিকদারের সমর্থক।
স্থগিত হওয়া সেই নির্বাচন নিয়ে ওই বছরের ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় সাবেক পিপি হাবীবুর রহমানের বাসায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সভাচলাকালে সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ-সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। এ সময় বাবুলের ভাই মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাবুল তালুকারের লোকজন ওই বাসায় আবারও হামলা করে। সেখানেই বাসার মালিক, সাবেক পিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবীবুর রহমান ও তার ভাই পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন খুন হন।
এ ঘটনার পর হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা হত্যা মামলায় আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করা হয়। এ মামলায় মোট ৫৫ ব্যক্তিকে আসামি করেন তিনি। তবে মামলাটির তদন্তে প্রচণ্ড প্রভাব খাটান আওরঙ্গ। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে জয় লাভ করায় টানা ১২ বছর এ মামলায় সঠিক চার্জশিট জমা দিতে পারেনি পুলিশ। ২০০৩ সালে আওরঙ্গর নাম বাদ দিয়ে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিলে বাদী তাতে নারাজি দেন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন। ২০১৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গ মারা গেলে আদালতের নির্দেশে নতুন করে চার্জশিট দাখিল হয়। তাতে আসামি করা হয় ৫৩ জনকে।
হাবীবুর রহমানের ছেলে শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে আমরা খুশি নই। আমার বাবা ও চাচার হত্যাকারীদের অনেকেই খালাস পেয়েছেন। আমরা উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে আপিল করবো।