তানভীর দিপু ।।
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত ২৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৪ জনই এখন কারাবাস
করছেন। নগরীতে সংঘটিত কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় পুলিশ
তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। একটি হত্যা মামলায় কারাগারে আছেন
২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার ও ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল
হাসান। পৃথক আরেকটি হত্যা মামলায় কারাভোগ করছেন ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
আলমগীর হোসেন। আর যুবলীগ নেতা রোকন উদ্দিনকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা
মামলায় কারাগারে গেছেন ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল বিন জলিল।
গুরুতর
সব ফৌজদারি মামলায় কুমিল্লা সিটির ৪ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কারাগারে থাকার
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান।
বিচারাধীন এসব হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় জনপ্রতিনিধিদের কারাবাসের ঘটনায়
বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে কুমিল্লার জনমনে। একই সাথে ৪টি ওয়ার্ডের
কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির কারণে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন
কুমিল্লাবাসী।
কুমিল্লার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বদরুল হুদা জেনু
কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ‘সিটি কাউন্সিলররা নাগরিকদের বিভিন্ন সেবায় নিয়োজিত
থাকেন। আশ্চর্য হলেও সত্য, আমাদের ৪ জন কাউন্সিলর রয়েছেন কারাগারে। এ
কারণে নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যারা জনগণের সেবায়
নিয়োজিত থাকেন, তারাই যদি বিবাদে জড়িয়ে পড়েন, সেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।’
সরেজমিনে
কুমিল্লার ২৭ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নাগরিকদের সাথে কথা বলে
দেখা গেছে, সবাই চায় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নিরপরাধভাবেই তাদের মাঝে
থাকুক। নাগরিকদের সার্বিক চাহিদাগুলো কাউন্সিলর যেন দ্রুত মেটাতে পারে এই
আশায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন তারা। এখন কাউন্সিলরের অনুপুস্থিথিতে
ভোটার আইডি কার্ড, বিভিন্ন ভাতা, সনদ এবং অনুদান আটকে গেছে। এমন
জনগুরুত্বপূর্ন বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নাগরিকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে
দীর্ঘদিন। এছাড়া অনেক উন্নয়ণ কাজও আধাআধি হয়ে আটকে আছে। কাউন্সিলর থাকলে এই
কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হতো।
নগরীর অন্যান্য যেসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর
অনুপস্থিত রয়েছেন একই কথা সেসব ওয়ার্ডের নাগরিকদেরও। তারাও চান সেবার জন্য
নির্বাচিত কাউন্সিলররা যেন সব সময় নাগরিকদের পাশে থাকেন।
কুমিল্লা
সিটির আরেক বাসিন্দা সাবেক জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন,
‘করোনা মহামারির মতো সময়ে নাগরিকদের নানান সমস্যায় কাউন্সিলররা আমাদের পাশে
থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা। অথচ আমরা যে চিত্র দেখছি, তা মোটেও কাম্য নয়।’
কাউন্সিলরদের
বিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক
সাক্কু জানান, যাদের সাথে কাউন্সিলরদের সমস্যা তারা রাজনৈতিকভাবেও একই
দলের। সুতরাং রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত অথবা প্রতিহিংসা যে কোন কারণে
কাউন্সিলরদের সাথে এমন ঘটনা হতে পারে। সামনে নির্বাচন-এ কারনেও এটা হতে
পারে, এটা তাদের তাদের ব্যাপার। এটাতে সিটি কর্পোরেশন বা নাগরিকরা
সম্পৃক্ত না। এটা এলাকা ভিত্তিক কোন বিভেদ নয়, এটা মনে হয় ব্যাক্তিগত। এটা
যদি তারা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেয় ভালো হবে।
মেয়র সাক্কু বলেন, যেসব
ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা অনুপস্থিত আছেন, আমি সেসব ওয়ার্ডের কার্যক্রম
প্রত্যক্ষভাবে দেখাশোনা করছি। সচিবদের বলা আছে, যেকোনো কাজের জন্য তারা যেন
আমার কাছে আসেন। জনগণ কাউন্সিলরদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন পাশে থাকার
জন্য; এখন তাদের এই অবস্থাটা দুঃখজনক।’
উল্লেখ্য, কুমিল্লা নগরীর
ছাতিপট্টি এলাকায় গত ১৯ মার্চ যুবলীগের মিছিলে প্রকাশ্যে গাড়ি তুলে দিয়ে
যুবলীগ নেতা রোকন উদ্দিনকে গুরুতর আহত করেন নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
সাইফুল বিন জলিল। এই ঘটনার পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ে দেশীয়
অস্ত্রসহ তার উদ্দাম নৃত্য। পরে পুলিশ সাইফুল বিন জলিলকে গ্রেপ্তার করে এবং
যুবলীগ নেতা রোকনের দায়ের করা মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
এছাড়া
২০২০ সালের ১১ নভেম্বর যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান জিলানী হত্যা মামলায়
কারাভোগ করছেন ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার ও ২৭ নং ওয়ার্ড
কাউন্সিলর আবুল হাসান। ওই বছর ১০ জুলাই যুবলীগ কর্মী আক্তার হোসেন হত্যা
মামলায় কারাভোগ করছেন ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন।
চলমান
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় আবারো নানান কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে
সরকার। কাউন্সিলরদের মাধ্যমেই এসব নিরাপত্তা ও জনসেবামূলক কাজগুলো কার্যকর
করে থাকে সিটি কর্পোরেশন। তাই কুমিল্লাবাসীর প্রত্যাশা, সিটির ২৭টি
ওয়ার্ডের সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিরপরাধভাবে জনগণের পাশে থাকবেন সবসময়।