ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকৃতিবান্ধব হোক
Published : Wednesday, 24 March, 2021 at 12:00 AM
 
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকৃতিবান্ধব হোকঅধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ।।

শিক্ষা ও সাংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন শুরু হয় ১৯৬৫ সনে। সেই থেকে অনেক পরে ২০০৬ সনে কোটবাড়ী শালবনবিহারের পাশে ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে কুমিল্লা বিম্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ইউএসটিসি না চেয়ে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে চালু করতে আরও ১টি বৎসর পর অর্থাৎ ২০০৭ সালে ছাত্র ভর্তি আরম্ভ হয়। সমাজবিজ্ঞান, কলা, ব্যবসা প্রশাসন, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও আইন এ ছয়টি ফেকাল্টিতে ১৯টি বিভাগ চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরও তিনটি বিভাগ সহসাই খুলবে বলে আশা করা যায়। ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক ব্যবস্থা অপ্রতুল বিধায় নগরী থেকে ছাত্রছাত্রীরা বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করে যা নগরে যানজটেরও একটি কারণ। ফেকাল্টিগুলোতে সকল বিভাগ খোলা হয় নাই আবার অনেক ফেকাল্টিও এখন নাই। তাই বর্তমান সরকার এগুলো সুসজ্জিত করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বদ্ধপরিকর।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও ফেকাল্টি, বিভাগ, ছাত্রছাত্রী বসবাসের জন্য আবাসিক হল, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা এবং হাইওয়ে থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণসহ সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড ও ভূমি অধিগ্রহণের নিমিত্তে ১৬৫৫ কোটি টাকা সরকার বরাদ্দ দিয়েছেন। শুনা যাচ্ছে ১০০০ ছাত্র এবং ১০০০ ছাত্রীদের আবাসিক হল এবং শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ১০তলার ছয়টি ভবন এ বরাদ্দের অন্তর্ভূক্ত। এরই মধ্যে ২০১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে যার ৪০% ভাগ পাহাড়ী অঞ্চল এবং ৬০% ভাগ সমতল ভূমি। সমতল ভূমি নিয়ে আমাদের কোন দুশ্চিন্তা নাই তবে পাহাড়ী অঞ্চল নিয়েই আমাদের সকল চিন্তা ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। কেননা এ অঞ্চলের লালমাই অধ্যুসিত পাহাড়ী এলাকার কয়েকটি বিশাল অংশ ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে নির্বিচারে মাটি কাটায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। পাহাড়ী এলাকাটি খুব বেশী উঁচু পর্বতশৃঙ্গ বা রকি মাউন্টেইন নয়। বিরাট ধংসযজ্ঞ করে পাহাড় কেটে বনাঞ্চল ধংস করে কোন নির্মাণ কাজই চালানোর প্রয়োজন হবে না। কেননা ষাটের দশকে একটি পাহাড়েরও সৌন্দর্য্য নষ্ট না করে মহান দার্শনিক আখতার হামিদ খান বিশালকায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডিমিটি নির্মাণ করে দিয়ে গিয়েছেন যা আজ জাতীয়-আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি সুন্দর স্থাপনা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। পাহাড়সমূহ রক্ষা করলে যে শুধু প্রকৃতি রক্ষা পাবে তা নয়, স্থাপনার উপরে দাড়িয়ে উপভোগ করতে পারবে আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘের ভেলা। চিম্বুক পাহাড়ের মত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থান না করলেও ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা পাহাড় ও বিশ্ববিদ্যালয় মেশানো বিরল দৃশ্য অবলোকনে মাঝে মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হওয়ার সুযোগ পাবে। পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সচেষ্ট হলে ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখায়ও মনযোগী হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের বিশ্বাস।
 
প্রথমে যত কম পাহাড় কেটে হেরিংবোন রাস্তা তৈরি করে দুপাশে কাচা ড্রেন তৈরি করে দুটি বৃষ্টির সিজন দেখার পর পাকা ড্রেন তৈরি করে তারপর পাকা রাস্তা বানাতে হবে। তারপর রাস্তার দুপাশে দালানের সমান স্পেইস খালি রেখে খালি স্পেসের চতুষ্পার্শ্বে বনাঞ্চল রক্ষা করতে হবে এবং রাস্তা, ইমারত, ড্রেন ছাড়া বাকী পাহাড়ের সম্ভবত উচ্চতা রক্ষা করে প্রাকৃতিক বনের গায়ে হাত দেয়া যাবে না। পাহাড়ের প্রাকৃতিক শ্রেণিবিভাগ নষ্ট করা যাবে না এবং পাহাড়ের অবস্থানগত আদলে পাহাড়ের উপর স্থাপনা তৈরি করতে হবে। কিছুদিন পূর্বে একটি হলের পাশের বনে কে বা কাহারা আগুন লাগিয়ে প্রকৃতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্তপূর্বক তা বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়টি পাহাড় ও বনাঞ্চলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর বর্তমানে একাডেমিক ননএকাডেমিক ও কো-কারিকুলার অবস্থানসমূহে প্রশংসনীয়স্থানে আছে কিন্তু বনাঞ্চলে অগ্নিকান্ডের কোন খবর এখনও আমরা পাইনি। সর্বোচ্চ ১/৩ ভাগ পাহাড়ের উচ্চতা কমিয়ে সমতল ভূমি সৃষ্টি করে স্থাপনার চেয়ে অধিক ভূমি খালি রেখে নির্মাণ কাজ করতে হবে এবং নির্মাণ শেষ হওয়ার পর পরই ঐ খালি স্থানে বাগান ও বন সৃষ্টি করতে হবে । কোনক্রমেই রাস্তা, ড্রেন ও ইমারত ছাড়া ইট সিমেন্টের কাজ করা যাবে না এবং বনও উজাড় করা যাবে না। নির্মাণ কাজ ও পরিকল্পনার পূর্বে অবশ্যই পরিবেশবিদ / পরিবেশ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর কন্সালটেশন ছাড়া কাজ চালালে পরিবেশবাদীসহ এতদঅঞ্চলের জনগন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনিয়ম হিসেবে দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরবে বলে সকল মহলের বিশ্বাস।


লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল