ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ক্যাচ ছেড়ে ম্যাচ হারল বাংলাদেশ
Published : Wednesday, 24 March, 2021 at 12:00 AM
ক্রীড়া প্রতিবেদক: জিমি নিশামের ব্যাট ছুঁয়ে বল উইকেটের পেছনে। সহজ ক্যাচ অযথা ডাইভ দিতে গিয়ে ছেড়ে দিলেন মুশফিকুর রহিম। টম ল্যাথামের টাইমিংয়ের গড়বড়ে সহজ ক্যাচ, ধরতে পারলেন না বোলার মেহেদি হাসান নিজেই। পরপর দুই ওভারে সুযোগ হাতছাড়া, বাংলাদেশের আশার সমাধি সেখানেই। ল্যাথাম আর নিশাম মিলেই নিউ জিল্যান্ডকে এগিয়ে নিলেন জয়ের পথে। অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন অধিনায়ক ল্যাথাম।
সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা পেল না বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মঙ্গলবার ৫ উইকেটের জয়ে নিউ জিল্যান্ড নিশ্চিত করল সিরিজ জয়।
আগের ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের হতাশা পেছনে ফেরে এবার রান এনে দিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বোলাররাও চেষ্টা করলেন। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে ফসকে গেল ম্যাচ। ওই দুটি সহজ সুযোগ ছাড়াও ছিল আরও দু-তিনটি ‘হাফ চান্স।’ ছিল সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করার দু-তিনটি সুযোগ। সহজ-কঠিন, কিছুই কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
তামিম ইকবালের দায়িত্বশীল ৭৮ ও মোহাম্মদ মিঠুনের ক্যারিয়ার সেরা ঝড়ো ৭৩ বাংলাদেশকে এনে দেয় ২৭১ রানের পুঁজি। নিউ জিল্যান্ড ল্য ছুঁয়ে ফেলে ১০ বল বাকি রেখে।
হ্যাগলি ওভালে ২৬০ রানের বেশি তাড়া করে জয় এটিই প্রথম। সেই রেকর্ড যাত্রায় ১১০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ল্যাথাম স্মরণীয় করে রাখলেন এই মাঠের প্রথম দিন-রাতের ম্যাচ।
দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের কাছ থেকে পাওয়া উপহার কাজে লাগিয়েই নায়ক ল্যাথাম। জীবন পাওয়ার সময় তার রান ছিল ৫৮। মুশফিকের ব্যর্থতায় নিশাম বেঁচে যান ৩ রানে।
পরে নিশাম আউট হন ৩০ রানে। তবে ল্যাথামের সঙ্গে ততণে ম্যাচ জেতানো ৭২ বলে ৭৬ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন তিনি। এই জুটিতেই পিষ্ট হয় বাংলাদেশের সম্ভাবনা।
এই জুটির আগে ম্যাচে ভালোমতোই টিকে ছিল বাংলাদেশ। লড়িয়ে পুঁজি পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম ল্য ছিল মার্টিন গাপটিলকে ফেরানো। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন এই ওপেনার। দারুণ এক স্লোয়ারে তাকে (২০) ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান।
দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে উইকেটে দেখে পাওয়ার প্লের ভেতর মেহেদি হাসানকে আক্রমণে আনেন তামিম। কাজে লেগে যায় তা দারুণভাবে। এই অফ স্পিনারের প্রথম দুই ওভারে বোল্ড হেনরি নিকোলস ও উইল ইয়াং।
১১ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের ছিল ৩ উইকেটে ৫৩।
সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেয় ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ের জুটি। ঠা-া মাথায় এক-দুই করে নিয়ে দলের রান বাড়ান দুজন। বাজে বল পেলে কাজে লাগান তা। ১২৩ বলে আসে জুটির শতরান।
বোলাররা যখন কোনো উপায়ই পাচ্ছেন না এই জুটি থামানোর, তখনই তামিমের এক মুহূর্তের প্রখরতা। দারুণ সরাসরি থ্রোয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক রান আউট করেন কনওয়েকে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা ব্যাটসম্যান থামেন ৭২ রানে।
কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলরকে ছাড়া মিডল অর্ডারকে আরও চেপে ধরার সুযোগ তখন। বোলাররা সুযোগ সৃষ্টিও করেন। ক্যাচ ছেড়ে ভেস্তে যায় সব। সহজ দুটি ক্যাচ হাতছাড়ার পর পয়েন্টে লাফিয়েও অল্পের জন্য বলের নাগাল পাননি মেহেদী হাসান মিরাজ। শর্ট কাভারে একটুর জন্য ক্যাচ নিতে পারেননি মিঠুন, স্কয়ার লেগে মেহেদি। ল্যাথাম ও নিশাম ভুল করেননি সুযোগ কাজে লাগাতে।
শেষ দিকে মুস্তাফিজকে ছক্কা মারার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন নিশাম। তবে ম্যাচ তখন কার্যত শেষ। ল্যাথাম ও ড্যারিল মিচেল মিলে শেষ করেন কাজ।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই মেহেদির দারুণ বোলিং ম্লান হয়ে যায় তার নিজেরই ফিল্ডিং ব্যর্থতায়। তাসকিন আহমেদের বোলিং ফিগার যেমন ফুটিয়ে তুলতে পারে না তার প্রচেষ্টার ছবি।
বাংলাদেশের আশার শুরু দলের ব্যাটিং দিয়ে। আগের ম্যাচের হতাশা পেছনে ফেলে তামিম-মিঠুনরা দলকে এনে দেয় লড়াইয়ের পুঁজি।
হ্যাগলি ওভালের উইকেট ছিল দারুণ ব্যাটিং সহায়ক। বাংলাদেশ তবু ধাক্বা খায় শুরুতে। দ্বিতীয় ওভারেই লিটন দাস বিদায় নেন শূন্য রানে।
তামিম শুরু করেন প্রথম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে আত্মবিশ্বাসী এক ফিকে চার মেরে। তবে লিটনের বিদায়ের পর সাবধানী হয়ে ওঠেন কিছুটা। তিনে নেমে সৌম্য সরকার ব্যাটে-বলে করতেই ধুঁকছিলেন শুরুতে। বেশ কয়েকবার অল্পের জন্য তার ব্যাটের কানা নেয়নি বল।
৭ ওভার শেষে দলের রান ছিল ১ উইকেটে ১৪।
অষ্টম ওভারে হেনরিকে দারুণ তিনটি বাউন্ডারিতে রানের গতি কিছুটা বাড়ান তামিম। প্রথমটি ফিক করে, পরেরটি পুল শটে, শেষটি নান্দনিক স্কয়ার ড্রাইভে।
অস্বস্তিময় শুরুর পর সৌম্য কিছুটা ছন্দ পেতে শুরু করেন। তামিমের সঙ্গে তার জুটি জমে ওঠে। কিন্তু লড়াই করে টিকে থাকা সৌম্য হুট করেই ছুঁড়ে আসেন উইকেট। মিচেল স্যান্টনারকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে যান ৪৬ বলে ৩২ করে। শেষ হয় তামিমের সঙ্গে তার ৮১ রানের জুটি।
এরপর তামিম ও মুশফিকুর রহিমের জুটিও জমে উঠছিল। ৮১ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর তামিম খেলছিলেন দারুণ। রানের গতিও বাড়াচ্ছিলেন। তখনই নিশামের অসাধারণ প্রচেষ্টায় তিনি রান আউট।
নিশামের একটি বল মুশফিকুর রহিম আলতো করে খেলেই ছুটতে থাকেন দ্রুত সিঙ্গেল নিতে। সাড়া দেন তামিম। ছুটে আসেন বোলার নিশামও। নিচু হয়ে বল কুড়িয়ে থ্রো করার সময় তখন নেই। নিশাম বাঁ পায়ে টোকা দেন বলে, একদম নিখুঁত নিশানা। বল যখন স্টাম্পে লাগল, তামিম তখন ক্রিজ থেকে বেশ দূরে।
১০৮ বলে ১১ চারে ৭৮ করে তামিম ফিরেন হতাশ হয়ে। মুশফিকের সঙ্গে জুটি থামে ৪৮ রানে।
চতুর্থ উইকেটে মুশফিক ও মিঠুনের সৌজন্যে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি পায় দল। দুটি জুটিতে অবদান রাখলেও মুশফিক টাইমিং পাচ্ছিলেন না ঠিকমতো। তার অস্বস্তিময় উপস্থিতি শেষ হয় ৫৯ বলে ৩৪ রান করে স্যান্টনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে।
তবে মিঠুন পথ হারাননি। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে গড়েন ৪৫ বলে ৬৩ রানের জুটি। যেখানে মিঠুনের অবদান ২৪ বলে ৩৪!
মাহমুদউল্লাহ পারেননি কাজ শেষ করে আসতে। মেহেদি হাসান ফেরেন বোল্টকে দারুণ এক ছক্কা মারার পরই। মিঠুনকে ফেরানে পারেননি কেউ। শেষ বলেও তার ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি। ৬ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন তিনি ৫৭ বলে ৭৩ রান করে।
নিউ জিল্যান্ডকে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ দিয়ে তখন তরতাজা বাংলাদেশের আশা। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতায় কিউইদের তাদের মাটিতে হারানো হলো না এবারও।