লোকসানের মুখে নিজেদের স্মার্টফোন ব্যবসার ইতি টানছে দক্ষিণ কোরিয়ান ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ‘এলজি ইলেকট্রনিক্স’। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি ফোন বিভাগের জন্য সব ধরনের রাস্তা খতিয়ে দেখেছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে, টানা ছয় বছর ক্ষতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে এলজি’র স্মার্টফোন ব্যবসা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির এ বিভাগের মোট আর্থিক ক্ষতি এসে দাঁড়িয়েছে চারশ’ ৫০ কোটি ডলারে।
স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে খারাপ অবস্থানে ছিল না এলজি। ২০১৩ সালে স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে পৌঁছেছিল প্রতিষ্ঠানটি। স্মার্টফোন বাজারে আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরার মতো নতুন নতুন উদ্ভাবনও নিয়ে এসেছিল তারা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ এখন বলছেন, ফোন বাজার “অসম্ভব রকমের প্রতিযোগিতাপূর্ণ” হয়ে উঠেছে।
এলজি ব্যবসা ছাড়ার কথা বললেও, স্মার্টফোন বাজারের অন্যতম দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান স্যামসাং এবং অ্যাপল এখনও ব্যবসা ধরে রেখেছে। দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য নিজস্ব হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সমস্যার মুখে পড়েছিল।
আর্থিক ক্ষতির মুখে নিজেদের ব্যবসায়ের আংশিক বিক্রি করে দেওয়ার জন্যও আলোচনায় বসেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
বিবিসি প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এখনও উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এলজি। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য স্থানের বাজার নিজ অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে, দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে এলজি ফোন এখনও প্রচলিত একটি নাম।
ব্যবসা ছাড়া প্রসঙ্গে এলজি এক বিবৃতিতে বলছে, “অসম্ভব রকমের প্রতিযোগিতাপূর্ণ ফোন খাতের বাজার ছাড়ার এলজি’র কৌশলি সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানটিকে বিদ্যুতচালিত গাড়ির উপাদান, সংযুক্ত ডিভাইস, স্মার্ট হোমস, রোবোটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং বি২বি সমাধান, এবং প্ল্যাটফর্ম ও সেবার মতো বর্ধমান খাতে সম্পদের ব্যাপারে মনোনিবেশ করতে দেবে।”
গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের তথ্য বলছে, গত বছর এলজি দুই কোটি ৮০ লাখ ফোন বিক্রি করেছে। অন্যদিকে, স্যামসাং বিক্রি করেছে ২৫ কোটি ৮০ লাখ ফোন।
এলজি’র বিদ্যমান পাঁচটি বিভাগের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগটি সবচেয়ে ছোট। প্রাতিষ্ঠানিক আয়ের মাত্র ৭.৪ শতাংশ আসে এখান থেকে। বর্তমান বৈশ্বিক ফোন বাজারের দুই শতাংশ দখলে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
বড় মাপের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বাজার লড়াইয়ে নিজেদের ফোনের উদ্ভাবনী দিকেই জোর দিচ্ছিল এলজি। গত বছর ইংরেজি অক্ষর টি আকারের ‘উইং’ স্মার্টফোনও নিয়ে এসেছিল। ডিভাসটিতে বড় পর্দা সরিয়ে নিলেই নিচে থেকে ছোট একটি পর্দা বের হয়ে আসতো।
এখনও বিদ্যুত চালিত পণ্যের বড় একটি ভোক্তা ঘাঁটি এলজি’র দখলে রয়েছে। বিশেষ করে গৃহস্থালী পণ্য এবং টেলিভিশনের বাজারে এখনও এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। স্যামসাংয়ের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিক্রিত টিভি ব্র্যান্ড ধরা হয় এলজি’কে।
গত বছরের ডিসেম্বরে অটোমোটিভ সরবরাহক ‘ম্যাগনা ইন্টারন্যাশনাল’ এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছিল এলজি। ওই যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুতচালিত গাড়ির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরি করবে প্রতিষ্ঠানটি।
এলজি’র হাতে এখনও যে ফোনগুলো তৈরি অবস্থায় রয়েছে তা বিক্রি করা অব্যাহত রাখবে তারা। বিদ্যমান গ্রাহকদের সেবা ও সফটওয়্যার সমর্থনও দেবে প্রতিষ্ঠানটি। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ নিজেদের বিভাগটি বন্ধ করতে পারবে বলে ধারণা করছে এলজি।
“আগামীতেও এলজি নিজেদের মোবাইল দক্ষতা কাজে লাগানো অব্যাহত রাখবে এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক খাতে প্রতিযোগী মনোভাব আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে মোবিলিটি-সংক্রান্ত প্রযুক্তি, যেমন ৬জি তৈরি করবে।” – বলেছেন এক এলজি মুখপাত্র।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এলজি’র প্রস্থানে দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং এবং চীনা প্রতিষ্ঠান অপো, ভিভো ও শাওমি সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
মহামারীতে বিশ্বে অন্যান্য খাতের মতো স্মার্টফোন ব্যবসাতেও প্রভাব পড়েছে। ২০২০ সালে বিক্রি কমেছে ১০ শতাংশ, মূলত লকডাউনের কারণে বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ থাকার ব্যাপারটি প্রভাব ফেলেছে।