মাসুদ আলম।।
করোনা
সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় আপাতত এক সপ্তাহের লকডাউনের খবরেই
কুমিল্লায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারসহ বড় বড় শপিংমল,
মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানপাটে কেনাকাটার হিড়িক পড়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি
ব্যাংকে নগদ টাকা উত্তোলনেও গ্রাহকদের ভিড় দেখা গেছে। আর বরাবরের মতো এবারও
ভোক্তাদের বাড়তি পণ্য কেনার এই ব্যস্ততার সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী
ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। একদিনের ব্যবধানে কুমিল্লায় দেশি রসুন কেজিতে ২০ টাকা
বেড়েছে। পাইকারি বাজারে শনিবার দেশি রসুন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল
রবিবার সেই রসুন বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারে
চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেও বাড়তি চাহিদার কারণে পাইকারিতেই বেশি দামে
কিনতে হচ্ছে। তবে দাম বাড়ার কথা অস্বীকার করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন,
বাজাওে পণ্যের কোনো সংকট নেই।
সোমবার থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য
লকডাউন শুরু হবেÑ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এবং সোশ্যাল
মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের পরই মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারে ভিড়
করছেন। বরাবরের মতো অনেকে একসঙ্গে বাড়তি পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন।
চকবাজারের
কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেছেন, কিছু মানুষ অযথা বেশি বেশি করে চাল, ডাল,
পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য কিনছেন। আর এ সুযোগে কেউ কেউ দ্রব্যের দাম বেশি নিতে
পারে।
এদিকে চকবাজার, রাজগঞ্জ ও রাণীর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,
সপ্তাহতিনেক ধরেই শাক-সবজির বাজার চড়া। আগে থেকেই চাল ও তেলের দাম বাড়তি
ছিল। তবে পণ্য সংকট নেই বাজারে। গতকাল রবিবারও সংকট ছিল না। কিন্তু এক
সপ্তাহের লকডাউনের খবরে হঠাৎ করে প্রতিকেজি চাল ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে
বিক্রি শুরু হয়েছে।
ফের লকডাউনের কথা ওঠার আগে ও পরে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব
পণ্যের দাম হিসেব করে দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। খুচরা
ব্যবসায়ীরা জানান, দুই দিনের ব্যবধানে ৪০ দেশি রসুন কেজিতে ২০ টাকা বাড়ার
পাশাপাশি বেড়েছে চায়না রসুনের দামও। ২৭ টাকার দেশি পেঁয়াজ ৩১ টাকা, ২৬
টাকার এলসি পেঁয়াজ ৩২ টাকায় উঠেছে। এছাড়া ২,১৮০ টাকায় ৫০ কেজি বস্তায়
বিক্রি হওয়া মোজাম্মেল চাল ২,২২০ টাকা, আটাশ ক্যাটাগরির চাল ৫০ কেজির বস্তা
২,৬৭০ টাকা থেকে বেড়ে ২,৭৫০ টাকা হয়েছে। ৬৪ টাকার চিনি কেজিতে বেড়েছে ২-৩
টাকা। ১২৮ টাকার সোয়াবিন তেল লিটারে ৭-৮ টাকা বেড়ে গেছে।
এদিকে রমজানে
ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ৭২ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া এক নম্বর ছোলা রবিবারের
বাজারে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়, খেসারি ৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮-৮০ টাকা, মোটর
৪৩ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, বুটের ডাল ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪ টাকা, মুড়ি ৭৮
থেকে বেড়ে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আধা কেজি সুরমা খেজুর ১৮০ টাকা
থেকে একদিনের মাথায় বেড়ে ২১০ টাকা, খোলা বরই খেজুর ১৯৫ টাকা থেকে বেড়ে ২১০
টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা
পর্যন্ত কুমিল্লার সবচেয়ে বড় নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার চকবাজার এবং নগরীর
রাজগঞ্জ বাজার ও রাণীর বাজারে ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা গেছে।
কেন বেশি
করে কিনছেনÑ জানতে চাইলে কুমিল্লা সদরের জালুয়াপাড়া থেকে আসা এক নারী
জানান করোনায় আবারও সরকার লকডাউন ঘোষণা করছে। তাছাড়া সামনে রমজান তাই
সবকিছু একটু বাড়িয়ে কিনে নিচ্ছি। যদি সরকার আবার লকডাউন বাড়িয়ে দেয়, সেই ভয়
কাজ করছে।
আবুল খায়ের নামে এক রিকশাচালক জানান, মানুষ বেশি বেশি
জিনিসপত্র কিনে রিকশায় করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন যা কেনে তার কয়েকগুণ
কিনছে। দুইদিন ধরে মানুষের আসা-যাওয়া বেড়েছে বাজারে।
চকবাজারে আসেন
নগরীর শাকতোলা এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী জাহাংগীর। তিনি জানান, বাজারে ক্রেতার
সংখ্যা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের চেয়ে বেশি খুচরা ক্রেতা।
সবাই লকডাউনের ভয়ে বেশি করে কিনছেন। অযথা ক্রেতারা এভাবে বাজার নষ্ট
করছেন।
আবুল হাশেম নামে চকবাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, পাইকারি বাজার
হওয়ায় এখানে সাধারণত সব সময় ভিড় থাকে। তবে এখন লকডাউনের খবর শুনেই ক্রেতারা
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি কিনতে বাজারে আসছেন। অন্যদিকে চলতি মাসের
মাঝামাঝি থেকে রোজা। অনেকেই মাসের ও রমজানের বাজার একসঙ্গে করছেন। তাই
বাজাওে ক্রেতা কিছুটা বেশি।
কুমিল্লার মাছ, মাংস ও সবজির বাজারেও
ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা গেছে। এখানেও ক্রেতারা লকডাউন ও রমজানকে ঘিরে
অতিরিক্ত জিনিসপত্র ক্রয় করছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর
কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো
পণ্যের নির্ধারিত দাম থেকে অতিরিক্ত নেওয়ার অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা
নেবো। সোমবার থেকে লকডাউন এবং সামনে রমজানকে ঘিরে আমাদের সার্বক্ষণিক
মনিটরিং থাকবে বাজারে। এছাড়া কুমিল্লার ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে সোমবার বসবেন
জেলা প্রশাসক। সেখানে পণ্য আমদানি এবং মূল্য নিয়ে যাতে ব্যবসায়ীরা অসৎ
উপায় অবলম্বন না করে, সেই বিষয়ে কথা হবে।’
এদিকে অন্যান্য জরুরি সেবার
আওতায় এবারের লকডাউনেও খোলা থাকবে ব্যাংক। তবু রবিবার নগদ টাকা উত্তোলনে
কুমিল্লার বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাগুলোতে ভিড় করেছেন গ্রাহকরা। এতে
ব্যাংকগুলোতে অসম্ভব হয়ে পড়ছে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। এ পরিস্থিতিতে
করোনা সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়ছেন গ্রাহকদের পাশাপাশি ব্যাংককর্মীরাও।
কুমিল্লা
ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ
প্রতিরোধে আমাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদপে নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের মাস্ক,
হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সামাজিক দূরত্ব রার প্রয়োজনীয়
পদপেও রয়েছে। ব্যাংকের প্রবেশমুখে গ্রাহকদের জুতা জীবাণুমুক্ত করা এবং
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এত বেশি গ্রাহকের আনোগোনা
যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’