ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লার পালপাড়ায় ট্রাকের সাথে অটো রিকশার সংঘর্ষ
মাছ ধরতে যাওয়ার পথে প্রাণহারালেন ৩ প্রতিবেশী
Published : Monday, 5 April, 2021 at 12:00 AM, Update: 05.04.2021 12:54:57 AM
মাছ ধরতে যাওয়ার পথে প্রাণহারালেন ৩ প্রতিবেশীতানভীর দিপু:
শখের মাছ ধরার আনন্দ রূপ নিলো স্বজন হারানোর বেদনায়। শখ পূরনে দল বেঁেধ মাছ শিকারে যাওয়াটাই যেন কাল হলো কুমিল্লা সদর উপজেলার চাঁনপুর ডুমুরিয়া এলাকার কাদের(৭০), মতিন(৬৫)ও হেলাল মিয়ার(৬০)। আজ রবিবার সকালে একই উপজেলার পালপাড়া গোমতী সেতুর পার্শ্ববর্তী এলাকায় দ্রুতগামী ট্রাক চাঁপায় নিহত হন একই এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ৩ জন অটোরিকশা যাত্রী। আহত হয়েছে আরো অন্তত আরো ৩ জন। তারা সবাই একসাথে গোমতী নদীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বরশি দিয়ে মাছ শিকারে বের হয়েছিলেন। দুর্ঘটনার পর ট্রাক রেখে পালায় চালক ও হেল্পার। ট্রাকটিকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। আহতদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
নিহত কুমিল্লা শহরতলী ডুমুরিয়া চাঁনপুর এলাকার ফুল মিয়ার ছেলে হেলাল মিয়া (৬০),মকবুল হোসেনের ছেলে মতিন মিয়া (৬৫) ও ফোরন মিয়ার ছেলে আবদুল কাদের (৭০) কুমিল্লা শহরতলীর ডুমুরিয়া চাঁনপুরের বাসিন্দা।  
এযাত্রায় প্রাণে বেঁেচ আসা অটোযাত্রী আবদুল মান্নান আঘাত পেয়েছেন বাম পায়ে। সবচেয়ে কম আঘাত পাওয়া এই লোকটিরও ভেঙেছে বাম পা। দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল মান্নানকে জানানো হয়নি তার ৩ সঙ্গীর মৃত্যুর খবর। মান্নান সাংবাদিকদের জানান, চৈত্র মাসে খেতে-খামারে কোন কাজ থাকে না। তাই প্রতিবেশি ৬ জন মিলে গোমতী নদীতে বরশি দিয়ে মাছ শিকারে যাচ্ছিলেন। নদীর পালপাড়া সেতু এলাকায় পৌছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী বালুবাহী ট্রাক ধাক্কা দেয় অটোরিকশাটিকে। এরপর আর কিছু মনে নাই।
নিহত আবদুল মতিন মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনিই সবাইকে গুছিয়ে রওনা হয়েছিলেন নদীর দিকে। মতিনের ছেলে লোকমান বাবার হাতের বরশি ধরে নির্বাক হয়ে আছেন। এর কয়েক গজ দূরেই আবদুল কাদেরের ঘর,সেখান থেকেও আসছে আর্তনাদের আওয়াজ। আবদুল কাদেরের স্ত্রী জ্যোৎ¯œা বেগম বিশ্বাসই করতে পারছেন না-তার স্বামী আর নেই। এই বাড়ি থেকেই শুনা যায় দুর্ঘটনায় নিহত আরো একজন হেলাল মিয়ার বাড়িতে কান্নার শব্দ। সেখানেও কাঁদছেন রিকশা চালক হেলালের স্ত্রী আর দুই মেয়ে। একই এলাকার তিন জন মুরুব্বি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে থমকে গেছে পুরো এলাকা। ঘরে ঘরে চাপা কান্নার আওয়াজ। নিহত হেলালের বড় ভাই সফর আলী জানান, এলাকার যে কোন মানুষের দুঃসময়ে দিন রাত পাশে থাকতেন হেলাল মিয়া। সকালেও বাড়ির সীমানা প্রাচীর ঠিক করা সময় দেখা হয়। এর দুয়েক ঘন্টা পর শুনলাম ভাই এক্সিডেন্ট করেছে, ঢাকায় নেয়ার পথে মারা গেছেন। এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।
সফর আলী অভিযোগ করে জানান, গোমতীর বাঁদ সড়কে চলাচল করা ট্রাকগুলোর গতি বেপরোয়া থাকে। এর আগেও এই সড়কে ট্রাক চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকজন মোটর সাইকেল আরোহী। এই রাস্তায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রনে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, একজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। বাকিদের হাসপাতালে পাঠাই। পরে শুনতে পাই আরো ৩ জন মারা গেছেন। ট্রাকটি খালি ছিলো, চালক সেটি ফেলে পালিয়েছে। এটা একটি ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক।
কুমিল্লা কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ারুল হক জানান, দুর্ঘটনার ঘটনায় মামলা হবে। ট্রাক চালক পলাতক তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। ট্রাক ও দুর্ঘটনা কবলিত অটোরিকশাটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।