শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে সারাদেশে। এই সময় জরুরি সেবা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও অন্যান্য সবকিছু বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে। ফের এক সপ্তাহের লকডাউনে দিশাহারা খেটেখাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়াও বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে দেবিদ্বার উপজেলার সদরের সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে সেসবের চিত্র।
কাপড় ব্যবসায়ী আবু কালাম, আ. কুদ্দুস, কসমেটিকস ব্যবসায়ী শাহজাহান, সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী কাজী সোহেলসহ একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, গেলো বছর করোনায় দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে আর্থিকভাবে মারাত্মক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। লকডাউনকালীন বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে জীবনযুদ্ধ করে তা পুষিয়ে নিয়েছি আবার ফের লকডাউন। এরপর আবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল-জরিমানাও করা হয়। ব্যবসা করে বেঁচে থাকার বদলে সংসার নিয়ে বেকাদায় আছি।
অটোরিকশা চালক আলী মিয়া বলেন, ‘গাড়ির আয়ই আমার সংসার চলে। লকডাউনে আমাদের না খেয়ে মরার মতো অবস্থা তৈরি হয়। মানুষ ঘর থেকে বের না হলে ভাড়া পাওয়া যায়না। এমনিতেই গতবছরের অভাব-অনটন সেরে উঠতে পারছি না। এখন আবার লকডাউন না খেয়েই মরতে হবে।
কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতিদিন ব্যবসা করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলতো। কিন্তু বর্তমানে মানুষের সমাগম বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নির্দেশে দোকান বন্ধ। এখন আমরা গরীব মানুষ কোথায় যাব। এভাবে কিছুদিন গেলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। দেবিদ্বার সদর এলাকায় ফুটপাতে ভ্যানে করে কলা বিক্রি করছেন মোসলেম মিয়া ও জাহাঙ্গীর আলম। তারা দুজন এ প্রতিবেদককে জানান, সারাদিন দুই/তিন’শ টাকাও বিক্রি হয়নি। লকডাউনের কারণে রাস্তাঘাটে মানুষ কম। জোর করেও কারো কাছে কলা বিক্রি করা যায়না। এভাবে তো আমাদের সংসার চলে না। সব মিলেয়ে ছেলে সন্তান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।
ফুটপাতে তরমুজ বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ভাই ভ্যানে করে তরমুজ বেঁচে পাঁচ জনের সংসার চালাই। আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। সারাদিন তিন চারশো টাকা বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বাজারের খাজনা নিয়ে গেছে দেড়শো টাকা, আমরা তো গরিব মানুষ। চিন্তা করছি এখন কী করব। কোথায় যাব কার কাছে যাব। কেউ তো আমাদের দিকে তাকায় না। সিএনজি চালক জাকির হোসেন বলেন, সিএনজি নিয়ে বের হলেই মালিককে জমা দিতে হয় ৫০০ টাকা, আর আমি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভাড়া মারছি ২৫০ টাকা। লকডাউনের কারণে রাস্তায় লোক নাই। আমাদের তো জমানো টাকা নাই যে এক সপ্তাহ বসে খাব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে দেবিদ্বারের সকল দোকান পাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিম্ন আয়ের কোন মানুষ যদি উপজেলা প্রশাসন থেকে সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তা করতে প্রস্তুত রয়েছি। কোন মানুষই খাদ্যোর অভাবে থাকবে না। আমরা এমন কোন তথ্য পেলে তার বাড়িতে খাদ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করব।