বিমানবন্দরে চুরি হওয়া ১১ লাখ টাকার সোনা লক্ষ্মীপুরে উদ্ধার
Published : Wednesday, 7 April, 2021 at 12:00 AM
৯ বছর ধরে দুবাইয়ে আছেন মেহেদী হাসান। সেখানে ব্যবসা করেন তিনি। ২৩ মার্চ দেশে আসেন তিনি। এবার নগদ টাকা না এনে সঙ্গে এনেছেন ১১৬ গ্রাম ওজনের দুটি সোনার বার। ২৩২ গ্রাম সোনার বার কিনতে তার খরচ হয় প্রায় ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে এই সোনার বারের জন্য শুল্ক দিলেন আরও ৪০ হাজার টাকা। আর এই সোনার দুটি বার কাস্টমস জোন থেকেই চুরি হয়ে যায়।
যাত্রীদের অভিযোগ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কৌশলগত অদক্ষতায় এমন ঘটনা ঘটছে প্রায়। নিঃস্ব হওয়ার হতাশা নিয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন মেহেদী হাসান। তাকে নিরাশ করেনি আর্মড পুলিশ। ১৩ দিন পর লক্ষ্মীপুর থেকে এই সোনার দুটি উদ্ধার করে মেহেদী হাসানের কাছে তুলে দেয় বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ।
মেহেদী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২৩ মার্চ সকালে দুবাই থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসি। ইমিগ্রেশন শেষ করে বেল্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে কাস্টমস জোনে আসি। আমি তাদের জানাই আমার কাছে সোনার বার আছে দুটি, আমি শুল্ক দেবো। পরবর্তীতে আমি সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা শুল্কও পরিশোধ করলাম।
শুল্ক পরিশোধ শেষে গ্রিন চ্যানেল থেকে বের হয়ে যাবেন মেহেদী হাসান, এমন সময় একজন কাস্টম কর্মকর্তা সন্দেহ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ, মানিব্যাগসহ সব কিছু স্ক্যানারে দিতে বলেন।
মেহেদী হাসান বলেন, এক কাস্টমস কর্মকর্তা আমাকে বললেন হাতে কী, আমি বললাম গোল্ড। শুল্ক দিয়েছি কিনা জানতে চাইলো। আমি শুল্ক দেওয়ার কাগজ দেখলাম। তিনি আমাকে বার দুটি একটি ট্রে-তে রাখতে বললেন। আমার ব্যাগ, সেই ট্রে স্ক্যানার মেশিনে দিতে বললেন, আমি দিলাম। তারপর আমাকে বডি স্ক্যানার মেশিনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে বললেন, আমি সেখান দিয়ে হেঁটে আসলাম। স্ক্যানার মেশিনের এ প্রান্তে আমি দাঁড়িয়ে আছি, কাস্টম কর্মকর্তা আমাকে কিছু প্রশ্ন করছেন, পাসপোর্ট দেখছেন। আমিও তার প্রশ্নের উত্তর দিলাম সব।
মেহেদী বের হয়ে আসলেন বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন থেকে। গাড়ি পার্কিং এরিয়ায় যাওয়ার পর মেহেদী টের পান তিনি সঙ্গে করে সোনার বার দুটো আনেননি, যা তিনি কাস্টমসের স্ক্যানার মেশিনে দিয়েছিলেন। দৌড়ে ছুটে গেলেন কাস্টমস জোনে। কিন্তু সোনার বার ফেরত পেলেন না।
পরবর্তীতে কাস্টম কর্মকর্তারা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখান। এতে দেখা যায় এক যাত্রী সোনার বার দুটি নিয়ে গেছে।
মেহেদী হাসান বলেন, কাস্টম কর্মকর্তারা বললেন, এখানে কাস্টম অফিসের কোনও দায় নেই, তাদের কিছু করারও নেই। তখন আমি আরও হতাশ হয়ে গেলাম। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
বিমানবন্দরে এক যাত্রী মেহেদীকে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অফিসে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। কাস্টম জোন থেকে আর্মড পুলিশের অফিসে আসলেন মেহেদী। তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিলো আর্মড পুলিশ। মেহেদীকে আশ্বাস দেওয়া হলো উদ্ধার হবে সোনার বার।
দুবাই প্রবাসী মেহেদী হাসান বলেন, আমি শুল্ক দিলাম। কোনও লুকোচুরি তো করিনি। তারা আমার কাছে যা জানতে চেয়েছে বলেছি, শরীর, ব্যাগ সবই স্ক্যান করেছি তাদের কথা মতো। আমি ভুল করে চলে গেলাম আর আমার বার দুটো নাই হয়ে গেলো? তাদের (কাস্টমস) উচিত ছিল স্ক্যান হওয়ার পর বার দুটি আমাকে অথবা তাদের হেফাজতে রাখা। কিন্তু তাদের গাফলতিতে চুরি হলেও তারা কেন দায় নেবে না।
মেহেদী বলেন, আমি এপিবিএন অফিসে আসলাম, তাদের বিস্তারিত খুলে বললাম। তারা আমাকে আশ্বাস দিলেন বার দুটো উদ্ধার করে দেবেন। বাড়িতে চলে গেলাম সেদিন।
১২ দিন পর খুশির খবর পেলেন মেহেদী। তার বার দুটি উদ্ধার করা হয়েছে, তাকে নিয়ে যেতে ফোন করলো বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। ৫ এপ্রিল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে বার দুটি ফেরত নিয়ে যায় মেহেদী।
মেহেদী বলেন, আমি আসলে দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। আমি বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ, তাদের আন্তরিকতার কারণে বার দুটি ফেরত পেলাম।
কিন্তু কে নিলো মেহেদীর বার আর কিভাবেই উদ্ধার হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ শুরু করি। কাস্টমসের স্ক্যানার মেশিন থেকে ব্যাগ নিয়েছেন কয়েকজন যাত্রী। তাদের মধ্যে একজন ট্রে-তে রাখা দুটি বার নিয়ে যান। কিন্তু কে সে যাত্রী? সেটি শনাক্ত করতে আমাদের সময়ও লাগে কিছুটা।
আলমগীর হোসেন বলেন, বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা আমরা নেই। একজন যাত্রীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই। যিনি একইদিন দুবাই থেকে এসেছেন। সেই যাত্রী স্ক্যানার মেশিনে দুটি সোনার বার দেখতে পান, আর তা নিজের পকেটে নিয়ে নেন। সেই যাত্রী কোন গাড়িতে গেলেন, তার পাসপোর্ট সহ বিভিন্ন তথ্য আমরা সংগ্রহ করি। পরে জানতে পারি সেই যাত্রী বার দুটি নিয়ে লক্ষ্মীপুর নিজের গ্রামের বাড়িতে গেছেন। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারপর তাকে বার দুটি ফেরত দিতে কৌশলগত পদ্ধতি অনুসরণ করি। সে বাধ্য হয়ে বিমানবন্দরে এসে বার দুটি ফেরত দিয়ে যায়।