করোনাভাইরাসে আক্রান্তের
সংখ্যা প্রতিদিনই আগের সব রেকর্ড ভাঙছে। বুধবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায়
আক্রান্ত হয়েছে সাত হাজার ৬২৬ জন। ফলে অবস্থা এমন হয়েছে যে হাসপাতালগুলোতে
রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। প্রতিদিন যে পরিমাণ বেড খালি হয় রোগী আসে তার কয়েক
গুণ। আইসিইউ সেবা দেওয়া জরুরি হলেও শয্যার অভাবে অনেক রোগীকেই এই সেবা
দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি অক্সিজেন সংকট তৈরিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হাসপাতালগুলোতে এরই মধ্যে কিছু শয্যা বাড়ানো হয়েছে। আরো শয্যা বাড়ানোর
উদ্যোগ চলছে। তাতেও কি রোগীর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে? স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ডা. জাহিদ মালিক নিজেই বলেছেন, যে হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা
না গেলে হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়িয়েও কোনো লাভ হবে না। কারণ সে অনুপাতে
সেবাদাতার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। তাহলে কি হবে? বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা
যাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি যাতে না হয় সে চেষ্টাই করতে হবে।
চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধের ওপর আরো জোর দিতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরাসহ
জরুরি স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। টিকা প্রদানের হারও বাড়াতে হবে।
মনে রাখতে হবে, টিকা দিলেও স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
আর এখানেই সমস্যা। বেশির ভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে চরমভাবে
উদাসীন। সামাজিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা, মাস্ক পরতেও তাদের অনীহা। তাহলে
অনাকাঙ্তি পরিণতি রোধ করা যাবে কিভাবে?
মানুষ নিজে সচেতন না হলে আইন
প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করা কোনোভাবেই
সম্ভব নয়। কতজনকে জেল-জরিমানা করা যাবে? আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর
সদস্যদের দেখলে মুখে মাস্ক পরবে বা হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখবে। তারা চলে
গেলেই আবার আগের মতো চলবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে
সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক তৎপরতা প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি এ েেত্র এনজিওসহ
নানা ধরনের সংগঠন, এমনকি সচেতন ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে
ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনসহ চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। চাইলেই
চিকিৎসক-নার্স বাড়ানো সম্ভব নয়, কিন্তু স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা বাড়িয়ে এবং
তাদের দ্রুত কিছু প্রশিণ দিয়ে সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করা যেতে পারে। সব
হাসপাতালে সম্ভব না হলেও বড় কিছু হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন
প্লান্ট স্থাপন করতে হবে। তা না হলে অক্সিজেন সংকট তীব্র রূপ নিতে পারে।
পরিপূর্ণ
লকডাউনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন কাজ। জীবিকা বন্ধ হয়ে বহু মানুষ
যাতে মৃত্যুর মুখোমুখি না হয় তা-ও দেখতে হবে। আবার খুব বেশি শিথিলতাও
কাম্য নয়। তাতে মহামারি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাবে এবং বহু মানুষের মৃত্যু হবে।
কিছু েেত্র সরকারকে কঠোর হতেই হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীগুলোকে
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও আরো বেশি তৎপর হতে হবে।