ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সচেতনতাই 'ভ্যাকসিন'
Published : Sunday, 11 April, 2021 at 12:00 AM
হাসান ইমাম ||
করোনাভাইরাসের অতি ছোঁয়াচে চরিত্র মানুষে মানুষে মেলামেশায় ছেদ ঘটানোর অবিকল্প বার্তাই দেয়। এ কারণে শারীরিক দূরত্বের বিধির উদ্ভব। বাংলাদেশের মতো বিপুল জনঘনত্বের দেশে এই বিধি কার্যকর করা গাণিতিক নিয়মেই সম্ভবপর বলে প্রতীয়মান হয় না। আর 'গণগরিবি' একে বলা চলে, অসম্ভবই করে তোলে। বিশেষ করে যাবতীয় কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্যের 'হাব' হয়ে থাকা শহরাঞ্চলে বিশেষ করে রাজধানী, বন্দরনগরীসহ বড় বড় নগরে মানুষে মানুষে ন্যূনতম তিন ফুট দূরত্ব বলবতের সঙ্গে প্রাত্যহিকতা চালু রাখার বিষয়টি শতভাগ ফলপ্রসূ হওয়ার নজির তাই গতবার স্থাপিত হয়নি। লকডাউনের মধ্যেও বহু মানুষ রাস্তায় বেরোতে বাধ্য হয়েছে। ছোটখাটো নানা কাজকর্ম, রিকশা-অটোরিকশা চালনা, হকারি, ফুটপাতে দোকানদারি থেকে শুরু করে দৈনিক ভিত্তিতে বিভিন্ন খাতে শ্রম দেওয়া দিন আনি দিন খাই মানুষের কাছে লকডাউন মানে পেটেরও 'লকডাউন'। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দিয়ে তাদের সহায়তার একটা চেষ্টা হয়েছে বটে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা এতই কম ছিল যে, ত্রাণবাহী কোনো গাড়িতে বা ত্রাণ বিতরণের স্থানে তাদের 'হামলে' পড়ার ছবি ও চলৎছবি পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনে দেশবাসী প্রত্য করেছে। সরকারি ত্রাণের 'নয়ছয়ের মহামারি' সংকট আরও তীব্র করে। এ বছর আবার নতুন করে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করার পরিপ্রেেিত অনাহারী মানুষের মুখের সারি অনেকেই মনের পটে ভেসে উঠে থাকবে। কিন্তু তার পুনরাবৃত্তি অবশ্যই কারও কাম্য নয়। সরকারও নিশ্চয়ই তা মাথায় রেখেই এ পথে হাঁটতে মনঃস্থ করেছে।
প্রথম কথা, গত ২৯ মার্চ কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় যে ১৮ দফা নির্দেশনা সংবলিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো, সেখানে সপ্তাহ না পেরোতেই কঠোরতম বিধিনিষেধের পথে যাওয়ার ন্যূনতম আভাস ছিল না। বিশেষজ্ঞদের তরফেও এর অনিবার্যতা আলোচিত হয়নি। এরপরও বিদ্যমান প্রোপটে দৈনিক আয়-রোজগারের ওপর নির্ভরশীল বিপুলসংখ্যক খেটে খাওয়া মানুষের জীবনধারণের কী হবে? এত বড় অনুপেণীয় একটি বিষয়ে পরিকল্পনা-প্রস্তুতি কর্তৃপরে আছে, এমনটাই বিশ্বাস করতে চায় সবাই। একজনের জীবন রায় অন্যের বেঁচে থাকা যেন দুর্বিষহ না করে তোলা হয় কোনোভাবেই।
করোনা পর্বের সমাপ্তি কবে হবে, আদৌ একে সমূলে বিনাশ করা যাবে কিনা তার স্পষ্ট উত্তর এখনও কারও কাছে নেই। কিন্তু মাঝে এর প্রকোপ কমায় দেশব্যাপী যে গণ-উদাসীনতা পরিলতি হয়েছে, তাকে আজকের পরিস্থিতির ত্রে তৈরির জন্য দায়ী বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। গণমানুষের অসচেতনতার বহিঃপ্রকাশে সরকারও যেন অনেকটা মুখ ঘুরিয়ে বসে ছিল। দু'-চার দিন অভিযান, মাস্ক না পরায় একটু-আধটু জরিমানা করা ছাড়া পুরো পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণে অন্য কোনো পদপে চোখে পড়েনি। দেশে টিকা প্রয়োগের সূচনাকে যতটা সরকারের 'বড় সাফল্য' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে তা সত্যও বটে। তবে গত এক বছরেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন, আইসিইউ সেবাসহ চিকিৎসার মান উন্নতিতে সে তুলনায় তেমন মনোযোগ দেওয়া হয়নি। ঘটা করে কোনো কোনো শিল্পগোষ্ঠী অস্থায়ীভাবে কভিড হাসপাতালের উদ্বোধন করেছে। সেসব আরিক অর্থেই 'অস্থায়ী'ই হয়েছে; বছর না ঘুরতেই সেগুলো উধাও।
সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমায় সাধারণ মানুষ তো বটেই, সরকারও যে একে কতটা হালকাভাবে নিয়েছিল, তার উদাহরণ ২ এপ্রিল এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপো করে প্রায় সোয়া লাখ পরীার্থীর সঙ্গে আরও লাখ কয়েক মানুষের জমায়েতের সুযোগ করে দিয়ে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে নজির স্থাপন করল, তা একদিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বললে কম বলা হয়, আবার অন্যদিকে করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতার দিকটিও প্রকটভাবেই সামনে নিয়ে আসে। ১৮ দফা নির্দেশনা জারির পাঁচ দিনের মাথায় যে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল এবং পরে আবার তা থেকে সরে আসা- এসব বিষয়ে দূরদর্শিতার স্যা মেলে না। অফিস-কাছারি খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ রাখার মতো সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে সংশোধনে তা প্রমাণিত। তবু মানুষ আশায় বাঁচে, সুদিনের আশায় থাকে। ব্যক্তিগত দায়িত্বশীলতা, পারিবারিক-সামষ্টিক সচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের যোগফলই করোনাকালের সেই এক ও অদ্বিতীয় আশা। সব পরে সুবিবেচনাপ্রসূত আচরণেই নিহিত করোনাকে পরাস্ত করার 'ভ্যাকসিন'।

সাংবাদিক
[email protected]