তানভীর দিপু: কুমিল্লা জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির তথ্য মতে, কুমিল্লা জেলায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ। জেলায় মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ; যেখানে সারা বাংলাদেশে গড় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে কুমিল্লায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা সারাদেশের তুলনায়ও বেশি। এই ১২ দিনে কুমিল্লায় করোনায় ৩৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ৩৯৭৭টি পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৯৯১ জন। কুমিল্লায় সংক্রমণ রোধে আগামীকাল থেকে সারাদেশের যে সর্বাত্মক লকডাউন তা কঠোরভাবে পালন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লা টাউন হলে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন করোনা প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা ও সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমেদ, মেডিকেল কলেজের পরিচিালক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহাদাৎ হোসেনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। এছাড়াও সভায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, আগামীকাল থেকে যে লকডাউন চলবে তা কুমিল্লায় কঠোরভাবে পালন করা হবে। কোন ভাবেই কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে না। কাঁচা বাজার বসবে খোলা জায়গায়। প্রতিটি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিরা লকডাউন মানাতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের টহল দল মাঠে থাকবে; কেউ লকডাউন অমান্য করলেই আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। লকডাউনে মসজিদে জামাতে নামাজ করতে হলে সর্বোচ্চ ২০ জন একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবে এবং তারাবির নামাজ আদায়ে মসজিদে সূরা তারাবি পড়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া ইপিজেড এর শ্রমিকরা তাদের নিজস্ব পরিবহনে যাতায়াত করবে, কোম্পানি থেকে নিজস্ব পরিচয়ধারী যানবাহন ছাড়া শ্রমিকরা চলাচল করতে পারবে না। হাসপাতালে কোন রোগী বা চিকিৎসাকর্মী যাতায়াতের জন্য রাস্তায় টহল পুলিশ কিংবা দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্ব স্ব পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কেউ ভুল পরিচয় দিয়ে চলাচল করে আইন অমান্য করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
সভায় আরো জানানো হয়, কুমিল্লায় করোনা ভাইরাসের যে উচ্চ সংক্রমণ গতি তা ঠেকাতে লকডাউন মানার কোন বিকল্প নাই। এই মুহুর্তে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায়, মৃত্যুর হারও এখানে বেশি। কিন্তু যে হারে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে হারে রোগী চিকিৎসার জন্য আসছে সেখানে আইসিইউ তো কেউ পাচ্ছেই না, উল্টো কম আক্রান্ত রোগীরাও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কুমিল্লা মেডিকেলের ১৮টি আইসিইউর একটিও খালি যাচ্ছে না। উল্টো চাঁদপুর, ফেণী, নোয়াখালী থেকে আশংকাজনক রোগীরা কুমিল্লা মেডিকেলের আইসিইউ সেবা নিতে আসছে। তাই যারা কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ মত ঘরেও চিকিৎসা নিতে পারেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে আরো একটি ওয়ার্ডে করোনা ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে, সেখানেও করোনার চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা ও সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার জানান, কুমিল্লাবাসীকে অনুরোধ করছি এবারের লকডাউন সর্বাত্মক ভাবে মানার জন্য। কেউ যেন লকডাউনে ঘরের বাইরে বের না হয়। কুমিল্লা এখন রেড জোনে আছে; আমরা চাই সারা দেশে যেন আমরা সবার আগেই গ্রীন জোনে আসতে পারি। আর নগরবাসী ঘরোই থাকবেন, প্রয়োজনে বাজার ঘরে পৌঁছে যাবে।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমেদ জানান, পুরো কুমিল্লাকে সিল্ড করে দেয়া হবে। কেউ যেন কুমিল্লায় প্রবেশ করতে না পারে এবং বের হতে না পারে। জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করবে কুমিল্লা জেলা পুলিশ। লকডাউন মানাতে পুলিশের অবস্থান হবে জোরালো।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহাদাৎ হোসেন তার বক্তব্যে জানান, করোনার সংক্রমণ কমিয়ে আনতে কঠোর ভাবে লকডাউন মানার কোন বিকল্প নাই। কুমিল্লায় সংক্রমণের গতি থামাতে এই ‘সংক্রমণ চেইন’ ভাঙতে হবে। এজন্য প্রয়োজন লকডাউনের সময়ে যে যার যার অবস্থানে থাকা। নতুবা আমাদের চরমমূল্য দিতে হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইস্ইিউ সংকট। জেলার বাইরে থেকেও রোগীর এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাই কুমিল্লাবাসীকে উচিত এই লকডাউনে নিজেকে ঘরে রেখে সুরক্ষিত রাখা। না হয় টাকা থাকলেও চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। আমরা আশা করি সাধারণ মানুষ লকডাউনে বাড়ি থেকে বের হবেন না।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলাপ্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান জানান, লকডাউনে সরকারের সব নির্দেশনা কঠোভাবে মানা হবে। কুমিল্লায় লকডাউনে কেউ বাইরে বের হতে পারবে না। শুধু ইপিজেড এর শ্রমিকরা তাদের নিজস্ব পরিবহনে কারখানায় যেতে পারবে। আর কেউ আইন অমান্য করলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা শেষে টাউন হল মাঠে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান করোনা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে ভ্রাম্যমান দুধ, ডিম, মাছ, মাংস বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোদন করেন।