তানভীর দিপু:
কুমিল্লা
জেলায় করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় এবার বেসরকারি মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালগুলোকেও যুক্ত করা হচ্ছে। সরকারি নির্ধারিত মূল্যেই ইস্টার্ন
মেডিক্যাল কলেজ, ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজ ও সেন্ট্রাল মেডিক্যাল কলেজে
শীঘ্রই করোনা চিকিৎসা শুরু করা হচ্ছে। এই তিনটি মেডিকেলে অন্তত ৪০টি বেড
স্থাপন করা হবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য। এতে দ্রুত বাড়তে থাকা
সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় কুমিল্লা জেলা আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। শনিবার
কুমিল্লা জেলাপ্রশাসকের কক্ষে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এই
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক
মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সীমিত ও করোনা পরিস্থিতির কারণে
স্বাস্থ্যবিধি সংরক্ষিত সভায় উপস্থিত ছিলেন করোনা প্রতিরোধ কমিটির উপদেষ্টা
সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
সাধারণত করোনা
আক্রান্তরা খুব বেশি সংকটাপন্ন না হলে আইসিইউ বেড এর প্রয়োজন হয় না। কিন্তু
আক্রান্তদের অনেকেরই চিকিৎসার শুরুতেই হাইফো অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তাই
সভায় সিদ্ধান্ত হয় এ তিনটি মেডিক্যাল কলেজে ৪০ টি হাইফো নেজাল ক্যানোলা বেড
থাকবে। এর মধ্যে ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজে ২০ টি, ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজ ও
সেন্ট্রাল মেডিক্যাল কলেজে ১০ টি করে বেড করা হচ্ছে। আগামি বুধবারের মধ্যে
(২১ এপ্রিল) দ্রুত তিনটি মেডিক্যাল কলেজে করোনা চিকিৎসা চালু করা হচ্ছে।
এজন্য সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালকদের তাৎক্ষনিক নির্দেশনা
দেয়া হয়।
করোনা প্রতিরোধ কমিটি সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে আরো ১০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হবে। খুব
দ্রুতই এই বেডগুলো স্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা
হচ্ছে। মেডিকেলে এই ১০ টি বেড আইসিইউ স্থাপিত হলে কুমিল্লার মানুষ কিছুটা
হলেও আইসিইউ সংকট থেকে বাঁচবে।
এছাড়া আগামী মঙ্গলবার কুমিল্লা সদর
হাসপাতালে ৩০ বেডের করোনা ইউনিট উদ্বোধন করা হবে বলে সভায় জানানো হয়। হাইফো
অক্সিজেনের ব্যবস্থাসহ ৩০ বেডের এই ইউনিটটি কুমিল্লায় করোনা চিকিৎসায় আরো
একটি মাইলফলক হিসেবে যুক্ত হলো, এটিকে কিভাবে আরো বাড়ানো যায় তার জন্যও
চিন্তা করছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি।
সভায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের
পক্ষ থেকে জেলায় করোনার সর্বশেষ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায়
সংক্রমণ হার ২২ দশমিক ৩ শতাংশ বলে জানায় স্বাস্থ্যবিভাগ। স্বাস্থ্যবিভাগ
জানায়, সংক্রমণ হার কমে আসছে। লকডাউন শতভাগ মানানো গেলে সংক্রমণ আরো কমে
আসবে। সংক্রমণ কমলে কমবে প্রাণহানির সংখ্যাও। সেক্ষেত্রে আরো যে কয়দিন
লকডাউন আছে এই দিনগুলোতে অন্তত নগরীতে কঠোর ব্যবস্থা নিলে করোনা
আক্রান্তদের সংখ্যা কমে আসবে।
সভা শেষে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির
উপদেষ্টা আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি বলেন, কুমিল্লা নগরীতে
লকডাউনের পরিস্থিতি আরো উন্নীত করতে হবে। নগরবাসীর সচেতনতাই নগরবাসীর
সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে। শহরে চলাচল করা অটোরিকশা-সিএনজি গুলো বন্ধ রাখতে
হবে। যান চলাচল বন্ধ রাখা গেলেই সংক্রমণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এ
প্রসঙ্গে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ
কামরুল হাসান কুমিল্লার কাগজকে জানান, সরকার নির্ধারিত খরচেই কুমিল্লার
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোতে করোনার চিকিৎসা হবে। কুমিল্লায় সংক্রমণ হার
কমে আসছে। আমরা লকডাউনের ব্যাপরে আরো কঠোর হচ্ছি। কুমিল্লা নগরী ও উপজেলা
গুলো ঘুরে দেখেছি সন্তোষজনক হারে মানুষ লকডাউন পালন করছে। আগামী এক
সপ্তাহের মধ্যে কুমিল্লায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
সভায় উপস্থিত
ছিলেন, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোস্তফা কামাল আজাদ, পরিচালক
ডা. মোঃ মহিউদ্দিন, ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. কলিম উল্লাহ,
চেয়ারম্যান শাহ মোঃ সেলিম, ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কে এম মান্নান
ও সেন্ট্রাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সফিকুর রহমান পাটোয়ারি,
কুমিল্লা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহদাৎ হোসেন, বিএমএর সাধারন সম্পাদক ডা.
আতাউর রহমান জসিম, স্বাচিপের সাধারন সম্পাদক ডা. মোর্শেদুল আলমসহ জেলা
করোনা প্রতিরোধ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।