Published : Wednesday, 21 April, 2021 at 12:00 AM, Update: 21.04.2021 1:03:04 AM
তানভীর
দিপু: এবছর করোনায় প্রাণহাণির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় লাফিয়ে বাড়ছে। এবছর
কুমিল্লা জেলায় এপ্রিলের প্রথম ২০ দিনেই করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬২ জন।
গত বছর ২০২০ সালের করোনার প্রধম ধাক্কার শুরু থেকে মে মাস প্রাণ
হারিয়েছিলেন এর অর্ধেকেরও কম মানুষ, ২৮ জনের মত। যদিও ওই বছর করোনায় লক্ষণ
উপসর্গ নিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ছিলো বেশি। তবে আশার বিষয় হলো এই এবছর কেউ
করোনায় প্রাণ হারানো কিংবা লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে মারা ব্যক্তির মরদেহ ফেলে
পালাচ্ছেন না কেউ । অথচ সংক্রমিত হবার ভয়ে স্বজনের মরদেহ দাফন না করে
পালিয়ে যাবার ঘটনা ছিলো গত বছর করোনার মৌসুমের হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলোর
অন্যতম। এমনও হয়েছে, মা-বাবার মরদেহ ফেলে চলে গেছেন সন্তানরা, পরে দাফন
করেছে পুলিশ ও আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম। এবার করোনায় সেই আতংক কাঁটিয়ে উঠতে
পেরেছেন অনেকেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিবার পরিজনরা সীমিত পরিসরে অংশগ্রহন
করছেন স্বজনদের জানাজায় ও দাফনে। কুমিল্লা শহরের অন্যতম সরকারি
কবরস্থান টিক্কার চর কবরস্থানের দায়িত্বরত হাফেজ মোহাম্মদ সেলিম জানান, গত
বছর ২০২০ সালের এপ্রিলে এই কবরস্থানে মোট মরদেহ দাফন হয়েছিলো ১১টি, এবছরের
এপ্রিলের ১৮ দিনেই দাফন হলো ৫টি। তবে এবছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে
এমন মরদেহ জানানো হয়নি।
এদিকে শহরের অন্যতম বড় বেসরকারি কবরস্থান
টমছমব্রীজ কবরস্থানে গিয়ে কথা হয় সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক এছহাক মিয়ার সাথে।
তিনি জানান, গত কয়েক সপ্তাহে মরদেহ দাফনের সংখ্যা বেড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে
৪-৭টি মরদেহ গড়ে দাফন করা হয়েছে। তবে কোনটা করোনায় মৃত আর কোনটা স্বাভাবিক
ভাবে মৃত্যুবরণ করা এটা আমরা জানি না। অনেক সময় দেখি মরদেহ আসে, সাদা
পিপিই পরা লোকজন দাফন করে। আমাদেও লোকজন খালি কবর খুঁড়ে দেয়। কে কিভাবে
মারা গেছে সেটা লেখা নাই।
টমছমব্রীজ কবরস্থানে নিয়মিত কবর খোঁড়ার কাজ
করেন জলিল মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন ও আবুল হোসেন। গতবছরও করোনায় মারা যাওয়া
অনেক মরদেহ দাফন করেছেন তারা। আবুল হোসেন জানান, এবছরের এ মাসে মরদেহ
দাফনের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু গতবারের মত এবার না, এবার করোনায় মারা গেলেও
পরিবারের সদস্যরা সাথে আসছেন-জানাজা ও দাফণ করছেন। প্রয়োজন দাফনের জন্য যে
বিশেষ টিম আছে, তারা দাফন কাজে সহযোগিতা করছেন- কিন্তু গতবারের মত কেউ
‘লাশ’ ফেলে পালিয়ে যায়নি। এবার আর আতংকটা নেই। এটাও একটা আল্লাহর রহমত।
আঞ্জুমানে
মফিদুল ইসলাম-কুমিল্লায় যোগাযোগ করেও জানা গেছে এবছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে
মারা যাওয়া কোন বেওয়ারিশ মরদেহ এখনো আসেনি দাফনের জন্য। এমাসে এখনো পর্যস্ত
যে ৪টি মরদেহ আঞ্জুমানের মাধ্যমে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়েছে তার কোনটাই
করোনায় মৃত ছিলো না।
কুমিল্লায় স্বেচ্ছাস্বেবী সংগঠন হিসেবে সবচেয়ে বেশি
করোনায় মরদেহ দাফন করা সংগঠনের দলনায়ক ইউসুফ মোল্লা টিপু জানান, এবছর
করোনায় মারা গেলেও এটা নিয়ে গত বছরের মত আতংক নেই। এখন আত্মীয় স্বজনরা পাশে
থাকেন, সহযোগিতা পাওয়া যায়। এবছর মৃতের সংখ্যাটা গত বছরের তুলনায় বাড়ছে-
আমরা চেষ্টা কির কেউ আমাদেও ডাকলে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মরদেহগুলো
দাফণ করতে। এটা যে কোন ধর্মেও মানুষের মরদেহের বেলায়ই আমরা মেনে চলি।