
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের
নাম করোনাভাইরাস। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা মহামারি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে
আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার হলেও তা সব দেশ
সমানভাবে পাচ্ছে না। ইসরায়েলে প্রাপ্তবয়স্ক শতভাগ মানুষের টিকা দেওয়া হয়ে
গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরো কিছু দেশের টিকা দেওয়ার হার ৬৫ শতাংশ
বা তারও বেশি। অন্যদিকে কোনো কোনো দেশ এখনো টিকা দেওয়া শুরুই করতে পারেনি।
বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৫ শতাংশের মতো মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দিতে পেরেছে। এর
কারণ উৎপাদনকারী দেশগুলো থেকে টিকা বণ্টনে বৈষম্য। এই পরিপ্রেেিত
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকাকে বিশ্বজনীন পণ্য ঘোষণার
আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সর্বজনীন ভ্যাকসিন কাভারেজ অর্জনের ল্েয
উৎপাদনকারী দেশগুলোর উচিত অন্য দেশগুলোকে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করা।’
গতকাল মঙ্গলবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
ভার্চুয়াল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, এই সংকটময়
সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা খুব বেশি জরুরি
হয়ে পড়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা দেওয়া হয়েছে এমন মানুষের মধ্যে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনেক কম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য
যে বৈশ্বিক জনসংখ্যার বেশির ভাগই টিকার নাগাল থেকে অনেক দূরে। তারা তাকিয়ে
দেখছে, উন্নত দেশগুলো কিভাবে টিকা নিয়ে আগে নিজেদের সুরতি করছে। অথচ
বাংলাদেশের মতো আরো অনেক দেশ রয়েছে, যারা টিকা নয়, টিকা তৈরির প্রযুক্তি
পেলে নিজেরাই টিকা উৎপাদন করে নিতে পারত। বাংলাদেশের ওষুধশিল্প অনেক
অগ্রসর। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই টিকা তৈরির সমতা রয়েছে। উৎপাদক দেশ বা
প্রতিষ্ঠানের অনুমতি পেলে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মতো বাংলাদেশেও এই
টিকা উৎপাদন করা সম্ভব। সে েেত্র বাংলাদেশ তার নিজস্ব চাহিদা যেমন দ্রুত
মেটাতে পারত, তেমনি আরো অনেক দেশের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারত। বিশ্ব
জনগোষ্ঠীর কঠিন দুর্দিনে এমন জীবন রাকারী টিকা নিয়ে আর দশটি সাধারণ পণ্যের
মতো ব্যবসা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তি
হস্তান্তরের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা আশা করি,
জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতারা এ েেত্র অনুকূল সাড়া দেবেন।
বাংলাদেশে গত বছর
করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় এক দিনে মৃতের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৬৪। এরপর তা
ধীরে ধীরে নেমে আসে এবং ৩ মার্চ মৃতের সংখ্যা হয় পাঁচ। এর ৪৭ দিন পর গত
সোমবার মৃতের সংখ্যা হয়েছে ১১২। মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান আর যাতে দীর্ঘ না হয়
সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। লকডাউন আরো কঠোর করতে হবে। টিকা
সংগ্রহের চেষ্টা বাড়াতে হবে। কিন্তু টিকাপ্রাপ্তি নিয়ে যেহেতু অনিশ্চয়তা
রয়েছে, তাই কোনো উৎপাদকের সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনায় কিভাবে টিকা উৎপাদন করা
যায় তার ওপর আরো বেশি জোর দিতে হবে।