
এড. কাজী নাজমুস সাদাত ||
স্মৃতির পাতায় এপেক্স কাবের ৩৮ বৎসর। ১৯৮৪ সাল মরহুম এপে. এডভোকেট রেজাউর রহমান মামুন, অধ্য কুমিল্লা আইন কলেজ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এপেক্স কাব অব কুমিল্লার অধীনে শিানবীশ আইনজীবী হিসাবে কাজ করছি। এমন সময় একদিন রাতে কুমিল্লা এপেক্স কাবের তৎকালীন সভাপতি ( পরবর্তীতে এপেক্স বাংলাদেশের লাইফ গভর্নর ও সাবেক আইনমন্ত্রী) এপেক্সিয়ান এড. আবদুল মতিন খসরু ভাই আমার সিনিয়র এড. রেজাউর রহমান স্যারের চেম্বারে আসলেন এবং জানালেন, কিছুদিন পর কুমিল্লা আইন কলেজে এপেক্স এর জেলা -৩ এর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলন উপলে কাজ করার মত সক্রিয় এপেক্সিয়ানের খুবই অভাব। তখন স্যার, খসরু ভাইকে বললেন, নাজমুস সা’দাতকে এপেক্সিয়ান বানাও এবং আমাকে বললেন তুমি সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত চেম্বারে আসার প্রয়োজন নাই, খসরুর কথা মত এপেক্সের কাজ কর। সেই হতে আমি কুমিল্লা এপেক্স কাবের সদস্য হিসাবে কাজ শুরু করলাম। কিছুদিন পর কুমিল্লা আইন কলেজে জেলা-৩ এর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে আমি জেলা-৩ এর বেস্ট এপেক্সিয়ান মনোনীত হলাম। তারপর থেকে খসরু ভাইয়ের সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত এপেক্সের জেলা ও জাতীয় সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করতে থাকি। খসরু ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় এপেক্সের কর্মকা- আমার নেশায় পরিণত হয়ে যায়। তাঁর মৃত্যুতে এপেক্সের স্মৃতিগুলো বার বার ভেসে উঠছে।
এপেক্সিয়ান আবদুল মতিন খসরুর উদ্যোগে আমি কাব সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় ১৯৮৫ সালে বরুড়া উপজেলার আদ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি চু শিবিরের আয়োজন করা হয়। এতে ২০০০ এর অধিক রোগীকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ দেওয়া হয় এবং শতাধিক রোগীর ছানি অপারেশন করা হয়। ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তাঁহার উদ্যোগে বুড়িচং উপজেলার পূর্বহুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চু শিবির আয়োজন করা হয়, এতে ১৫০০ এর অধিক রোগীকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ দেওয়া হয় এবং একশর মতো রোগীর ছানি অপারেশন করা হয়। ১৯৮৮ সালে আমি জেলা গভর্নর থাকা অবস্থায় এড. আব্দুল মতিন খসরুর উদ্যোগে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মীরপুর বাস স্টেশনের বন্যা কবলিত রাস্তার উপরে নৌকায় থেকে বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা এপেক্স কাবের সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
লাইন গভর্নর এপেক্সিয়ান আবদুল মতিন খসরু ভাইয়ের মৃত্যুতে এপেক্স অঙ্গনে তাঁর সাথে থাকা স্মৃতিগুলো বার বার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ১৯৯১ সনের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম ও সন্দীপে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস হয়। ঘুর্ণিঝড়ের ৩ দিন পর কুমিল্লা এপেক্স কাব থেকে ত্রাণ বিতরণের জন্য আমি ও খসরু ভাই দুপুরে চট্টগ্রাম গিয়ে হোটেল শাহজাহানে উঠি। চট্টগ্রামে আসার পর খসরু ভাই জানতে পারলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য ঐ দিনই চট্টগ্রাম এসেছেন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের রেস্ট হাউজে আছেন। বিকালে আমাকেসহ খসরু ভাই নেত্রীর সাথে দেখা করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের রেস্ট হাউজে যান। সেখানে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও বেগম সাজেদা চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখতে পাই। শেখ হাসিনার নির্দেশে খসরু ভাই হোটেল শাহজাহান ছেড়ে আমাকে নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের রেস্ট হাউজে আসেন এবং আমরা এক খাটে সেখানে ৩ দিন থেকে ত্রাণ বিতরণ কাজ শেষে কুমিল্লায় ফিরে আসি।
মূলত আমি এড. আব্দুল মতিন খসরুর উৎসাহ অনুপ্রেরণায় এপেক্স আন্দোলনের সাথে নিবিড় সখ্যতা গড়ে তুলি। নি¤েœ আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন এপেক্স কাবস অব বাংলাদেশের সাথে জড়িত আমার কর্মকা- তুলে ধরলাম।
সেক্রেটারি, এপেক্স কাব অব কুমিল্লা ১৯৮৫-৮৬, প্রেসিডেন্ট, এপেক্স কাব অব কুমিল্লা ১৯৮৭-৮৮, জেলা গভর্নর - ৩ এপেক্স বাংলাদেশ ১৯৮৮-৮৯, বেষ্ট এপেক্সিয়ান ৬ষ্ঠ জেলা-৩ সম্মেলন, কুমিল্লা ১৯৮৪, বেষ্ট ডেলিগেট ৭ম জেলা-৩ সম্মেলন চট্টগ্রাম ১৯৮৫, বেস্ট ডেলিগেট ৮ম জেলা-৩ সম্মেলন, চট্টগ্রাম ১৯৮৬, বেস্ট ডেলিগেট জাতীয় সম্মেলন, সিলেট, ১৯৮৭, বেস্ট ডেলিগেট জাতীয় সম্মেলন, কুষ্টিয়া ১৯৮৮, চেয়ারম্যান, ২২তম জাতীয় সম্মেলন, কুমিল্লা ১৯৯৭, চেয়ারম্যান সংবিধান সংশোধনী কমিটি, এপেক্স বাংলাদেশ ১৯৯৮, চিফ কো-অর্ডিনেটর ন্যাশনাল স্কুলিং কমিটি, এপেক্স বাংলাদেশ ২০০১, লাইফ মেম্বার এপেক্স বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ১৯৯৮।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, এপেক্স বাংলাদেশের গঠনতন্ত্রের ছাপানো প্রচ্ছদের মোড়ক লাল কাগজের। এপেক্স এর জেলা ও জাতীয় সম্মেলনে আনীত মোশন সমূহের উপর চর্চা করতে গিয়ে এপেক্সের গঠনতন্ত্র আমার কন্ঠস্থ হয়ে যায়। এক সময় এপেক্স অঙ্গনে লাল বই (রেডবুক) হিসেবে পরিচিতি লাভ করি। লাইফ গভর্নর ও সাবেক জাতীয় সভাপতি শেখ পারভেজ উদ্দিন আহমেদ এখনও আমাকে রেডবুক হিসাবেই সম্বোধন করেন।
এপেক্স আন্দোলনে কাজ করতে গিয়েই এড. আব্দুল মতিন খসরুর সাথে নিবিড় সখ্যতা গড়ে উঠে। মহামারী করোনায় তাঁর আকস্মিক চলে যাওয়া আমাকে বেদনাকাতর করে তুলেছে।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সুপ্রীম কোর্ট বারের নির্বাচনের দিন তাঁর সাথে সর্বশেষ দেখা হয়। ভোট দিতে যাচ্ছি তিনি দাঁড়িয়ে ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। আমি যখন তাঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন তিনি কমলা খাচ্ছিলেন। হাতে একটি ভাঙ্গা কমলা আর কোন কমলা নাই। আমাকে দেখামাত্র বললেন, সাধন কেমন আছ, কমলা খাও, হাতে থাকা ভাঙ্গা কমলার কয়েকটি কোষ জোর করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। খসরু ভাই ফিরে আসবেন না, কিন্তু তার স্মৃতিগুলো থাকবে। আসুন সবাই মিলে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশত নসিব করেন। এপেক্স অঙ্গনের সবার সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আমিন।