কাট শটে বাউন্ডারি মেরে মুমিনুল হক সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন। বল সীমানায় পৌঁছাতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাড়লেন দীর্ঘশ্বাস। হয়তো অনেকদিন ধরে আটকে রাখা নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে হালকা হলেন এই ব্যাটসম্যান। বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি বলে কথা! যে সেঞ্চুরির জন্য মুমিনুলের অপেক্ষাটা দীর্ঘ ৮ বছরের!
পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ (বৃহস্পতিবার) লম্বা সময় ব্যাটিং করে নিজের সামর্থ্যের প্রামণ আরও একবার দিয়েছেন ‘পকেট ডায়নামো’। লঙ্কান স্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভার লেন্থ্ বলটি কাট করেন মুমিনুল। আর তাতেই বিদেশের মাটিতে প্রথম এবং টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান। মুমিনুলের এই ইনিংসের পর হয়তো তাকে নিয়ে চলা সমালোচনা কিছুটা হলেও কমবে।
ক্যান্ডি টেস্ট বাদে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের ৪২ টেস্টের ক্যারিয়ার। ঘরের মাঠে তার ব্যাট বরাবরই চওড়া হলেও বিদেশের মাটিতে তেমনটা নয়। দেশের মাটিতে ৫৬.৩৯ গড়ে মুমিনুলের রান ২ হাজার ৩১২। কিন্তু ঘর থেকে বাইরের মাঠে পা ফেললেই ব্যর্থতা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে। ফলে ২২.৩০ গড়ে মুমিনুলের রান মাত্র ৭৩৬! ঘরে-বাইরে পারফরম্যান্সের আকাশ-পাতাল ব্যবধানের তালিকায় শীর্ষ দুই নম্বরে মুমিনুল! বৃহস্পতিবার ২২ থাকা গড়কে এক সেঞ্চুরিতেই ২৫-এর ওপরে নিয়ে গেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। হয়তো এই সেঞ্চুরিতে নতুন এক মুমিনুলের উত্থান ঘটবে!
দেশের বাইরে খেলা ১৭ টেস্টের মধ্যে এশিয়ার তিন দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় মোট ৭ টেস্ট খেলেছেন মুমিনুল। ভারতে তিনটি, শ্রীলঙ্কায় তিনটি। উপমহাদেশের কন্ডিশনে রান করা কঠিন হওয়ার কথা নয়। অনেকটা হোম কন্ডিশনের মতোই ওখানকার সুবিধা। তারপরও ভারতে ৩ টেস্টে রান ৮৩, শ্রীলঙ্কায় ৩ টেস্টে করেছেন ১৬৮। পাকিস্তানে ১ টেস্টে করেছেন ৭১। দেশের বাইরে এটাই ছিল মুমিনুলের একমাত্র হাফসেঞ্চুরি।
‘আমি তো কোনও চাপে নেই। আমার দলও কোনও চাপে নেই। আমরা এখানে এসেছি ম্যাচ জেতার জন্য।’- ক্যান্ডি টেস্ট শুরুর আগের দিন মুমিনুল এমনটা বলেছিলেন। ম্যাচের দেড় দিনে এমন মুমিনুলকেই দেখা গেছে। তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে রেকর্ড জুটির পথে তারা। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে তৃতীয় উইকেটে গড়েছিলেন ২২৬ রানের জুটি। এর আগে চট্টগ্রামে লঙ্কানদের বিপক্ষে মুমিনুল ও মুশফিক মিলে তৃতীয় উইকেটে ২৩৬ রান করেছিলেন। ওটাই তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।
সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে ভারতের বিপক্ষে নেতৃত্ব পেয়েছিলেন মুমিনুল। কিন্তু তার নেতৃত্বে দুই টেস্টেই বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছে ব্যর্থতা ও হতাশা। নতুন অধিনায়কের শুরুটাও হয়েছিল বিভীষিকাময়। এরপর আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গেও হার সঙ্গী হয়েছে। হয়তো ক্যান্ডি টেস্ট দিয়েই মুমিনুলের নেতৃত্বে টেস্ট ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ!