আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী সদ্য প্রয়াত
এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর শূন্য আসনে (কুমিল্লা-৫) প্রার্থী হতে মাঠ চষে
বেড়াচ্ছেন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অন্তত দেড় ডজন নেতা। নির্বাচনের
তফসিল এখনো ঘোষণা না হলেও শোকসভা, মিলাদ মাহফিল, ইফতার পার্টিসহ নানা
আয়োজনে সম্ভাব্য প্রার্থীতার আগাম ঘোষণা দিয়ে রাখছেন তারা। সেই সাথে
দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। সব মিলিয়ে আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুর দুই সপ্তাহ
অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে অনেকটাই
নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। চলছে নানা মুখরোচক আলোচনা।গত ১৪ এপ্রিল
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কুমিল্লা-৫ আসনের পাঁচবারের সাবেক
এমপি ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি আবদুল মতিন
খসরু। মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর ২২ এপ্রিল তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। নিয়ম
অনুযায়ী আসন শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে এখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ
আসন থেকে আবদুল মতিন খসরু নৌকা প্রতীকে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮
সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেছিলেন। তাই
স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে কে হচ্ছেন একসময়ে দলের অপ্রতিদ্বন্দ্বি নেতা
এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর উত্তরসূরী? শূন্য আসনটিতে কে পাবেন আওয়ামী লীগের
মনোনয়নÑ এ নিয়ে আলোচনা ও নানান জল্পনা-কল্পনা। এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে
এসেছে মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত ১৮ জন নেতার নাম। এর রয়েছেন প্রয়াত খসরুর
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ছাড়াও তাঁর স্ত্রী-পুত্র ও ভাইয়ের নামও।
এছাড়াও
উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুপ্ত ইচ্ছা পোষণ করছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির
বেশ ক’জন নেতা। যদিও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়া কি নাÑ তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
গেলো ক’দিন
বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং নেতৃবৃন্দের সাথে
কথা বলে জানা গেছে এ আসনের উপ র্বিাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রার্থী হতে
চান বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী
লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, প্রয়াত এমপির স্ত্রী সেলিনা
সোবহান খসরু, পুত্র মুনেফ ওয়াসিফ, মতিন খরুর ভাই ও কুমিল্লা বারের সাবেক
সভাপতি আবদুল মমিন ফেরদৌস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র লীগের সাবেক
সভাপতি ও সোনার বাংলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আবু সালেহ মোহাম্মদ সেলিম
রেজা সৌরভ, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আবুল হাসেম খান,
ঔষধ প্রশাসনের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অবঃ) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান,
বুড়িচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা
আওয়ামী লীগ সদস্য আবদুস সালাম বেগ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক
এহতেশামুল হাসান ভূইয়া রুমী, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি
জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী, বুড়িচং উপজেলা
আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আল-আমীন, আওয়ামী লীগ নেতা ও ডিএলএম
গ্রুপের চেয়ারম্যান এম.এ মতিন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহতাব হোসেন, ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক
কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য শাহজালাল মোল্লা, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী
মানিক, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউল হাসান মাহমুদ, সাবেক ছাত্র নেতা ও শেখ
হাসিনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবদুল জলিলসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা।
এ
প্রসঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুড়িচং
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন বলেন,
বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় আবদুল মতিন খসরুর শূন্যতা পূরণ হবার নয়। তিনি মানুষের
সুখে-দু:খে পাশে ছিলেন। আমি দীর্ঘদিন তাঁর সাথে রাজনীতি করেছি। নির্বাচনের
বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।
প্রয়াত
আবদুল মতিন খসরুর ভাই এডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস বলেন, আমরা এখনো শোকগ্রস্ত
অবস্থায় আছি। উপ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে
পারিবারিকভাবে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে আমার ভাতিজা মুনেফ ওয়াসিফ
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সে যদি প্রার্থী না হয়, তখন আমি দলীয় মনোনয়ন
চাইবো।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুছ ছালাম বেগম বলেন,
আমি গতবার মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে নির্বাচন
করার ইচ্ছে আছে। এবার আশা করছি মনোনয়ন পাবো।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী
লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বলেন, খসরু
ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। তাঁর সকল উন্নয়ন কর্মকা-ে পাশে ছিলাম।
উপ নির্বাচনে প্রার্থীতার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দল যদি মনোনয়ন
দেয় আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর অসমাপ্ত
কাজগুলো সমাপ্ত করতে ভূমিকা রাখবো।
অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন, আমি
ছিলাম এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর একান্ত ¯েœহভাজন ও দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী।
আমি তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরী। এর আগে আমি ৬ বার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি। আশা
রাখি দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার আমাকে মনোনয়ন দিয়ে খসরু
ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার সুযোগ দিবেন।
বাংলাদেশ যুবলীগ
কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক এহতেশামুল হাসান ভূইয়া রুমি বলেন,
নেত্রীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। তিনি যাকে প্রার্থী মনোনয়ন দিবেন আমরা তার
পক্ষে কাজ করবো। তবে আমিও ইচ্ছুক। আমি প্রার্থী হয়ে প্রয়াত নেতা আব্দুল
মতিন খসরুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
এদিকে
এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুর পর পরই আওয়ামী লীগের এতোসংখ্যক নেতার
প্রচারণায় নামার বিষয়টিকে অনেকেই দেখছেন দৃষ্টিকটুভাবে। এ নিয়ে চলছে
মুখরোচক আলোচনাও। তবে আওয়ামী লীগ মাঠে সরগরম থাকলেও অনেকটাই চুপচাপ
বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে
বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়ায় বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রচার
প্রচারণা থেকে বিরত থাকছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয়
কৃষক দলের সাবেক সহ সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি
এ এস এম আলাউদ্দিন ভূইয়া বলেন, আবদুল মতিন খসরু একজন ভালো মানুষ ছিলেন,
জনদরদী নেতা ছিলেন। এ আসন থেকে দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি তার সাথে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। তার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনে উপ নির্বাচনে
অংশগ্রহণের বিষয়ে দলীয়ভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। কিন্তু আমি চাই এ
আসনে একজন যোগ্য ব্যক্তি এমপি নির্বাচিত হোক।
উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণের
বিষয়ে তিনি বলেন, কুমিল্লা-৫ আসনের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। দু’টি সংসদ
নির্বাচনেই আমি তাদের ভালোবাসার প্রমাণ পেয়েছি। তারা যদি চান আমি নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করিÑ তবে তাদের ইচ্ছার বিষয়টি আমি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে
দেখবো।