ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
শ্রমিকের জন্য চাই নিরাপত্তাবলয়
Published : Saturday, 1 May, 2021 at 12:00 AM
শ্রমিকের জন্য চাই নিরাপত্তাবলয়আজ ১ মে, মহান মে দিবস। মেহনতি মানুষের বিজয়ের দিন, আনন্দ ও সংহতি প্রকাশের দিন আজ। এই দিন এক বেদনাময় স্মৃতি রোমন্থনেরও দিন। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শিকাগোর হে মার্কেটে দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদেরই বিজয় হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত শ্রমিকদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রতিবছর দিবসটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে সারা দুনিয়ার মেহনতি মানুষ বিশেষ মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি পালন করে থাকে। এ বছরও বাংলাদেশে একইভাবে দিবসটি পালিত হবে।
মে দিবসের শতাধিক বছরের ইতিহাসে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার বিষয়ে অনেক আলোচনা, দেনদরবার হয়েছে, শ্রমিক আন্দোলন অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে। উন্নত অনেক দেশেই আজ শ্রমিক স্বার্থের বিষয়টি যথেষ্ট সুরক্ষা পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে আইএলও কনভেনশনসহ শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে স্বীকৃত অনেক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অনেক স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশেই শ্রমিকদের অধিকার এখনো ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত। কয়েকটি পেশা ছাড়া বাকি পেশার শ্রমিকরা এখনো কোনো হিসাবেই আসে না। এর মধ্যে আছে কৃষি, মাছ ধরা, নির্মাণশিল্প, কুটিরশিল্প, গ্রামগঞ্জে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা ছোটখাটো কারখানা, দোকান, ইটভাটা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে না আছে নিয়োগপত্র, না আছে কর্মঘণ্টা, না আছে উপযুক্ত মজুরি।
আজ মে দিবস এসেছে এমন এক সময়ে, যখন করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী একের পর এক কর্মহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী শ্রম খাতের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের প্রায় অর্ধেকই জীবিকার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যাঁরা দৈনিক মজুরি বা কর্মঘণ্টার ভিত্তিতে বিভিন্ন কাজ করেন, তাঁরাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। দিনমজুর এখন তীব্র সংকটে আছেন খাদ্যের পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবে। গৃহকর্মীর কাজ নেই। লকডাউন আর করোনাভাইরাসভীতি উপেক্ষা করে শত শত কর্মী এখন কর্মস্থলে ফিরছেন। বেতন-ভাতা, চাকরিচ্যুতি ও কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকি নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এ খাত। লে-অফ ও ছাঁটাইয়ের খবরও এসেছে কয়েকটি কারখানা থেকে।
আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শ্রমিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরিতে আন্তরিক হবে।