শুধু
শিল্পে-সাহিত্যে নয়, রবীন্দ্রনাথ আমাদের অস্তিত্বজুড়ে। বাঙালির চিন্তায়,
চেতনায়, মননে, এককথায় সমগ্র সত্তাজুড়ে তাঁর সদর্প অবস্থান। আজ ২৫ বৈশাখ, এই
মহান কবির জন্মদিন। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় তাঁকে স্মরণ করবে বাঙালি জাতি।
প্রাণের কবি পৌঁছে যাবেন প্রাণের আরো গভীরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
যদিও এবার বৈশ্বিক মহামারির কারণে সেভাবে অনুষ্ঠানাদি হবে না। কিন্তু তার
পরও রবীন্দ্রনাথ বাঙালির হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসন দখল করে আছেন।
রবীন্দ্র-সাহিত্যের
বিশালতা ও গভীরতায় বাঙালি জাতি ঋদ্ধ হয়েছে। তাঁর আত্মপরিচয় শাণিত হয়েছে।
সে কারণেই আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধেও রবীন্দ্রনাথ প্রেরণা হয়েছেন।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তির শত অপপ্রচার তুচ্ছ করে অভিন্ন ঐতিহ্যের
অসাম্প্রদায়িক পথ ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। জন্ম কলকাতায় হলেও তাঁর
চিন্তাভাবনা ও সাহিত্যের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে পূর্ববাংলা বা বর্তমান
বাংলাদেশ। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমিদারি দেখভালের জন্য তিনি শিলাইদহ,
শাহজাদপুর এবং সর্বশেষ পতিসরে তাঁর জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়েছেন। তাঁর
সাহিত্য রচনায় এসব অঞ্চলের প্রকৃতি, জীবন ও লোকসংস্কৃতির বিপুল প্রভাব
রয়েছে। পদ্মা তাঁর রচনায় উঠে এসেছে নানা বিচিত্র রূপে। প্রথাগত জমিদারদের
মতো না হয়ে তিনি সমাজসংস্কার ও মানুষের কল্যাণে নানামুখী পদপে নিয়েছেন।
কলের লাঙল বা যান্ত্রিক কৃষি ও উন্নত বীজ প্রবর্তনের চেষ্টা করেছেন। দরিদ্র
কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ জোগাতে গ্রামীণ কৃষি ব্যাংকের প্রবর্তন করেছিলেন।
সংস্কৃতির বিকাশেও নানামুখী পদপে নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনাচার
নিয়েও কথা বলেছেন। তাঁর লেখায় আমরা পাই, ‘বায়ুবিহারী জীববীজাণুগণ
ব্যাধিশস্য উৎপাদনের জন্য সর্বদা উপযুক্ত ত্রে অনুসন্ধান করিতেছে এই কথা
স্মরণ করিয়া আহার, পানীয় ও বাসস্থান পরিষ্কার রাখা আমাদের নিজের ও
প্রতিবেশীদের হিতের পে কত অত্যাবশ্যক তাহা কাহারো অবিদিত থাকিবে না।’ তিনি
লিখেছেন, ‘মানুষের দায় মহামানবের দায়, কোথাও তার সীমা নেই। অন্তহীন সাধনার
েেত্র তার বাস। ...আমরাও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করছি। সেই
ভবিষ্যেক ব্যক্তিগতরূপে আমরা ভোগ করব না। ...মানুষের বিদ্যা, মানুষের
সাধনা সত্য হয় সকল কালের সকল মানুষকে নিয়ে।...মানবধর্ম বলতে আমরা যা বুঝি
প্রকৃতির প্রয়োজন সে পেরিয়ে, সে আসছে অতিরিক্ততা থেকে।’
অসাম্প্রদায়িক
বাংলাদেশ কিংবা ‘সোনার বাংলা’ গড়তে হলে আমাদের অবশ্যই রবীন্দ্রমানসকে
উপলব্ধি করতে হবে এবং তাকে এগিয়ে নিতে হবে। জাতীয় জীবনে মনন ও চর্চার
পরিশুদ্ধ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি রবীন্দ্রচর্চার প্রসার ঘটাতে
নেওয়া হবে নানামুখী উদ্যোগ।