ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ইসলামে ঈদের সূচনা
Published : Wednesday, 12 May, 2021 at 12:00 AM
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির||মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কার  জীবনে বেঁচে থাকাটাই ছিল অত্যন্ত দূরূহ ব্যাপার। তাই সেখানে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন ও উদযাপনের সুযোগ মোটেও ছিল না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  যখন মদিনায় হিজরত করলেন তখন মুসলমানদের সামাজিক স্বাতন্ত্রবোধ প্রতিষ্ঠার সুযোগটি প্রথম এসেছিল। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সা.) এর মাধ্যমে মুসলমানদের জাতীয় উৎসব পালনের আজ্ঞা প্রদান করেন। হজরত আনাস (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরত করে মদিনা এলেন তখন সেখানকার অধিবাসীরা বছরে দুটি আনন্দ উৎসব আয়োজন করত। তাতে তারা খেলাধুলা ও আনন্দ-ফূর্তি করতো। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এ’দুটি দিনের বিশেষত্ব কী? তারা উত্তর দিলেন, আমরা জাহেলী যুগে এই দুই দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ-ফূর্তি করতাম। (আর সে ধারা এখনো অব্যাহত আছে) তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের আনন্দ উদযাপনের জন্য এই দুই দিনের পরিবর্তে উত্তম অন্য দুটি দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার একটি হলো ঈদুল ফিতর অপরটি কোরবানির দিন ঈদুল আযহা । (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১১৩৪, আল-মুসদাতরেক আলাস্ সহিহাইন, হাদীস: ১০৯১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ১৩৬২২)


সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব
ইসলাম মানবতার ধর্ম। বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ইসলামের আদর্শিক শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম পরিচয়। সর্বজনীনতা এর অন্যতম উপাদান। তাই সমাজের কেউ ভোগের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে আর কেউ জীবন যন্ত্রণায় কাঁতর আর্তনাদ করবে চিরকাল, মানব সমাজের এমন দৃশ্য ইসলাম দেখতে চায় না। তাই ইসলাম মুসলমানদের জন্য জাহেলিয়তের ধারায় বয়ে আসা কুরূচিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক উৎসবে যোগদান নিষিদ্ধ করে সর্বজনীন উৎসব হিসেবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার প্রচলন করেছে।
ঈদ এর সর্বজনীনতা রায় ইসলাম কার্যকর বিধানও প্রণয়ন করেছে। ঈদুল ফিতর এর সর্বজনীনতা রায় ইসলামের বিধান-

রোজা হারাম
ঈদুল ফিতরের সর্বজনীনতা রার জন্য ইসলাম মুসলমানদের ওপর এদিনে রোজা রাখা হারাম ঘোষণা করেছে। যাতে কেউ নফল রোজা পালনের মাধ্যমে জাতীয় উৎসবের সর্বজনীনতাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাতে না পারে। কারণ যে উৎসবে জাতির সকল সদস্য সমানভাবে অংশগ্রহণ করে না তাকে জাতীয় উৎসব বলা যায় না। আর ঈদুল আযহার দিনে তোমরা তোমাদের কেরবানির গোশত খাবে। (সুনানে আবু দাউদ: ২৪১৬, সহিহ ইবনে খুজাইমা: ২৯৫৯, আস্-সুনানুল কুবরা: ৮২৪৯)

সাদাকাতুল ফিতর
ঈদুল ফিতরকে সর্বজনীন করে তুলতে ইসলাম সামর্থবানদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছে। কারণ ঈদের উপকরণ নতুন কাপড়, ভালো খাবার, সুগন্ধি ইত্যাদি যোগাড় করতে চাই টাকা। সমাজের দরিদ্র মানুষ যাদের দৈনন্দিন জীবনটা চলে অভাব আর বেদনায় জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে, তাদের পে আনন্দের উপকরণ যোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই ইসলাম সামর্থবানদের ওপর তাদের রোজার (ভুল-ত্রুটির পরিমার্জনা) হিসেবে সাদাকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করেছে।

আর এটাকে দরিদ্র মানুষের অধিকার হিসেকে ঘোষণা করেছে। যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী অন্যের দয়া বা অনুগ্রহের অসহায় ভোক্তা হিসেবে হীনমন্যতায় ঈদ আনন্দে আত্মার অভিব্যক্তি হারিয়ে না ফেলে (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৯, সুনানে দারেমি: ২০৬৭, মুসদাতরেকে হাকেম: ১৪৮৮, আস্-সুনানুল কুবরা: ৭৬৯২, ফাযাইলুল আওকাত: ১৪৭, মারেফাতুস সুনান: ৮৪৩৮)

সালাতুল ঈদ
ঈদ আনন্দের সর্বজনীনতার আর একটি বড় উপাদান হলো সালাতুল ঈদ।
ঈদের দিন প্রথম প্রহরে এলাকার সকল মানুষ উম্মুক্ত ময়দানে সমবেত হয়ে একই ইমামের পেছনে ধনী-গরিব, শিতি-অশিতি, ছোট-বড়, সাদা-কালো নির্বিশেষে একই কাতারে দাঁড়িয়ে দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে মানবিক ঐক্য আর সাম্য-মৈত্রীর যে মহিমা ফুটে ওঠে সত্যিই তা বড় আনন্দের!
জাতীয় উৎসবে সব কিছুর আগে সম্মিলিতভাবে খোলা মাঠে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায়ের পবিত্র দৃশ্য মহান আল্লাহ খুবই ভালোবাসেন। তাইতো তিনি ঈদগাহে সমবেত মুসল্লিদের দেখিয়ে ফেরেশতাদের বলতে থাকেন, দেখো আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দাগণ তাদের ওপর আমার বিধান (রমজান মাসের রোজা) পালন শেষে আমার বড়ত্ব বর্ণনা করতে করতে প্রার্থনার জন্য সমবেত হয়েছে।
আমার বড়ত্ব আর মহত্বের শপথ! আমি তাদের সব প্রার্থনা মঞ্জুর করবো। অতঃপর মহান আল্লাহ সমবেত সকল মুসল্লিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা ফিরে যাও আমি তোমাদের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছি এবং তোমাদের পাপসমূহ পুন্য দিয়ে বদলিয়ে দিয়েছি। (বায়হাকি-শুআবুল ইমান: ৩৪৪৪, ফাজাইলুল আওকাত: ১৫৫, আহাদিসুল কুদসিয়্যাহ: ১৬৮)
বছর ঘুরে আসা ঈদুল ফিতরের দিনটি হোক সর্বজনীন উৎসবের দিন, বৈষয়িক আনন্দ পূর্ণ হোক । ঈদ মোবারক।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ইসলামী লেখক, চিন্তাবিদ,  ধর্মীয় টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান - গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা। মোবাইলঃ০১৭১৮-২২৮৪৪৬