‘যেভাবেই হোক’ তারা বাড়ি যাবেন
Published : Wednesday, 12 May, 2021 at 12:00 AM
রাস্তায়
অন্যবারের মত এবার আর যানজট নেই। তার বদলে আছে জনজট। দূরপাল্লার গাড়ি না
থাকলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা অপো করেন ‘কোনো একটা উপায় হবেই’ সেই আশায়।
মঙ্গলবার সকালে চন্দ্রা এলাকায় দেখা গেছে, এক পরিবারের কয়েকজন সদস্য
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দিকে হাঁটছেন। সামনের দিকে আগাচ্ছেন গাড়ি পাওয়ার
আশায়।
তাদের একজনের নাম রাসল মিয়া। পরিবার নিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় থাকেন তিনি। সেখানে কাঁচামালের ব্যবসা করেন।
রাসেল
বলেন, “গাড়ি সংকটের কথা চিন্তা করে আগেভাগেই স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের
বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ভোর থেকে চন্দ্রা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আছি। ১০টার
দিকেও কোনো গাড়ি পাইনি। বিকল্প কোনো গাড়ি পাওয়া যায় কিনা সেই আশায় একটু
সামনে যাচ্ছি।”
গাজীপুরের বাসন থানার লাবিব ফ্যাশন নামে একটি কারখানার
শ্রমিক মামুন মিয়া পরিবার নিয়ে ভোগড়া এলাকায় থাকেন। সেহরি খেয়ে বাসা থেকে
বের হয়েছেন। অটোরিকশায় ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছেন চন্দ্রায়।
তিনি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তার গন্তব্য রাজশাহীর মতিহার।
“চন্দ্রা এসে সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছি। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।”
কিভাবে
যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “একটা উপায় হয়ে যাবে। বাস যদি না পাই তাহলে
ট্রাকে উঠে চলে যাব। যত কষ্টই হোক, বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করব—এর
চেয়ে অন্য কোনো আনন্দ নেই। হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। করোনাভাইরাসে ভয় করিনা।
যা হয় হবে।”
কোনাবাড়ি এলাকার আকরাম হোসেন নামে একজন শ্রমিক বলেন, “১০ দিনের ছুটি পেয়েছি। এত দিন এখানে থেকে কী করব? তাই যেভাবেই হোক বাড়ি যাবই।”
নিজেকে মরিয়ম আক্তার নামে পরিচয় দিয়ে এক নারী বলেন, কোনাবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে এক হোটেলে বাবুর্চির চাকরি করেন তিনি।
“চাকরির কারণে বেশির ভাগ সময় বাড়ি যেতে পারি না। তাই বলে ঈদের সময় বাড়ি যাব না তাই কি হয়? তাই কষ্ট হলেও বাড়ি যাব।”
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। চেষ্টা চলছে জনসঙ্গম এড়াতে।
গাজীপুরের
কালিয়াকৈর থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, শিল্পকারখানা অধ্যূষিত
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে অন্য বছরগুলোয় যানজট
থাকলেও এবার তা নেই। তবে গাড়ি সংকটে সেখানে এবার সৃষ্টি হয়েছে জনজট।
“দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
দূরপাল্লার বাস না চললেও লোকাল বাস, ট্রাক-পিকআপ ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে।
গাজীপুরের
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, “দূরপাল্লার গাড়ি না থাকায়
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় মানুষের জট লেগে আছে। সকাল থেকে জট শুরু হয়ে বেলা
বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। কিছু কারখানা ছুটি হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা বাড়ি
যাওয়ার জন্য চন্দ্রায় অপো করছে। বিকালের পর থেকে চাপ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
“পরিস্থিতি
স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়
কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। মহাসড়কে পুলিশের একাধিক দল
কাজ করছে। আমরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করছি।”
গাজীপুর
সিটি ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর) সহকারী সুপার মো. মেহেদী হাসান বলেন,
“দুরপাল্লার বাস চলতে দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীরা লোকাল বাস, মাইক্রোবাস,
ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা করে ছুটছে।”