স্টাফ
রিপোর্টার।।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের সাংসদ জননেতা আব্দুল
মতিন খসরুর প্রয়ানে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। শূন্য এই আসনে উপনির্বাচন
১২ জুলাইয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সচিব জাফর আহমেদ। ইতিমধ্যে
আসনটি থেকে নৌকার মাঝি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ২ ডজনের বেশী প্রার্থী ।
এই
তালিকায় প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার রয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুমিল্লা জেলা
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা আল আমীন অর্নব।
তিনি মরহুম জননেতা আব্দুল মতিন খসরু’র স্নেহভাজন ছিলেন।
খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে দুই ডজনের বেশী নেতা এই আসন থেকে নির্বাচন করতে
আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই তালিকায় প্রয়াত সাংসদের স্ত্রী, ভাই যেমন রয়েছেন,
তেমনি আছেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। তবে পিছিয়ে নেই বঙ্গবন্ধুর
আদর্শের তরুণ নেতারাও। তেমনি একজন প্রার্থী একজন আল আমীন অর্নব।
কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও
কুমিল্লা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমীন অর্নব বুড়িচং
থানাধীন মোকাম ইউনিয়নের একটি সম্ভ্রান্ত আওয়ামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিকভাবেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত সে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে
তিনি ছিলেন অত্যন্ত ‘প্রডাক্টিভ’নেতা।
জানা গেছে, আল আমীন অর্নব
এইচএসসির পাট চুকিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে ভর্তি হন ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগে।
পরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে শুধু রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যে স্নাতক প্রথম বর্ষ শেষ না হতেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি
বিভাগে ভর্তি হন। এবং এখানে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। পরবর্তীতে অর্থনীতি
বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসএস এবং এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
আল
আমীন অর্নবের বলেন , কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই দেখি শিবির
এবং ছাত্রদলের ক্যাম্পাস দখলের নীল নকশা। তখন আমিই সর্বপ্রথম ক্যাম্পাসে
ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু করি। শুরুর পথটা মসৃন ছিলনা। রাজনীতি মুক্ত
ক্যাম্পাসে মেস ভিত্তিক কার্যক্রমে শিবির তখন অনেকটাই এগিয়ে ছিল এবং
ক্যাম্পাসে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছিল। তখন আমরা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার
এসোসিয়েশন গঠন করি। আর এই সংগঠনের ব্যানারেই ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু হয়
এবং চলতে থাকে। পরবর্তীতে এই সংগঠনটিই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
নামে আত্মপ্রকাশ করে।
ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত আল আমীন
অর্নবের কৌশলের কাছে দ্রুতই হার মানতে হয় শিবির ছাত্রদলসহ অন্য
সংগঠনগুলোকে। যার ফল শ্রুতিতেই এখনো ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থান
বিদ্যমান। এগুলো করতে গিয়ে তাকে অনেক হামলা এবং মামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
আল
আমীন অর্নব এবং তার সমসাময়িক নেতা কর্মীদের ত্যাগ এবং পরিশ্রমের উপহার
স্বরুপ তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জান সোহাগ এবং সিদ্দিকী
নাজমুল আলম ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। সেই
কমিটিতে আল আমীন অর্নবকে যুগ্ম আহ্বায়ক-১ পদ প্রদান করা হয়।
ক্যাম্পাস থেকে সাবেক হওয়ার পরও তিনি অদ্যবধি সকল রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করে আসছেন।
২০১৮
সালের জাতীয় নির্বাচনেও আলআমীন অর্নবকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন
পর্যবেক্ষন ও সমন্বয় উপ-কমিটির সদস্য করা হয়, দায়িত্ব প্রাপ্ত এলাকা ছিল
বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আল আমীন অর্নবের বাবা
হাজী সুলতান আহমেদ বুড়িচং থানা আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়া মোকাম ইউনিয়ন
বঙ্গবন্ধু পরিষদ সাধারণ সম্পাদক। মোকাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য
সচিবও তিনি।
তার বড় ভাই এডভোকেট ওমর ফারুক(সুপ্রিম কোর্ট) ঢাকা সিএমএম
কোর্টের এপিপি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ
আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য।
ছোট ভাই মেজবা উদ্দিন কুমিল্লা(দ:) জেলা ছাত্রলীগের সদস্য।
বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার
রাজনীতিতে আল আমীন অর্নবের পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। তার বাবা হাজী
সুলতান আহমেদ ছিলেন মরহুম আব্দুল মতিন খসরুর ঘনিষ্ঠ সহচর। সারা জীবন তিনি
কাটিয়েছেন বুড়িচং থানা আওয়ামীলীগ এবং নৌকার সকল প্রার্থীর জন্য।
উল্লেখ্য,
গত ১৪ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া
আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী
সমিতির সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু। তার
মৃত্যুর পর থেকেই মূলত আসনটির পরবর্তী এমপি কে হবেন তা আলোচনায় আসে।
নির্বাচন
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে আসনটিতে নিজেকে
অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে রেখেছিলেন আব্দুল মতিন খসরু। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪
এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ৫ বারের সাংসদ হয়ে
নিজেকে আওয়ামী লীগের অপরিহার্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই এ আসন
থেকে মনোনয়ন পেতে যেকোনো প্রার্থীকেই কাটখড় পোড়াতে হবে বলে মনে করেন
স্থানীয়রা।