একজন রোজিনা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাবালক সিদ্ধান্ত
Published : Saturday, 22 May, 2021 at 12:00 AM
মোশারফ হোসেন।।
যে
কোন সাংবাদ মিডিয়া জাতির বিবেক, আর সৎ সাংবাদিক, সেই মিডিয়া জগতের সূর্য
সন্তান। তবে সে সন্তান যদি কখনও অসৎ হয় কিংবা হলুদ সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়ে,
তখন সে সন্তান, দেশ ও জাতির জন্য কত ভয়াবহ হয়, সেটা বর্ণনা করে শেষ করা
যাবে না। তাই কোন ঘটনায় বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক কোন
ক্যাটাগরিতে পড়ে।
সাংবাদিক রোজিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম
ও দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদ ইতোপূর্বে প্রথম আলোতে প্রকাশ করেছেন।
সেই সব সংবাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোন পদপে নিয়েছেন বলে জানা
যায়নি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কর্মকা- সম্পর্কে
সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাই রোজিনা ইসলামের প্রতিবেদন
গুলো সাধারণ মানুষ ভিত্তি আছে বলে মনে করেন। সুতরাং রোজিনার তথ্য অনুসন্ধান
করার চেষ্টাকে হলুদ সাংবাদিকতা বলা যাবে না। তবে তার তথ্য অনুসন্ধানের
প্রক্রিয়াটি যথাযথ ও চৌকষ ছিল না। সে নিজে নথির থেকে ফটোকপি না করে,
সোর্সের মাধ্যমে ফটোকপিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করলে আজ তাকে এ
ধরনের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না।
তথ্য অনুসন্ধানী
সাংবাদিকদের কর্ম ও জীবন সব সময় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের কাজের মধ্যে মৃত্যু
ঝুঁকিসহ, নানান ভাবে হয়রানির সম্ভাবনা থাকে।সেটা জেনেই তারা তথ্য
অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কাজটি সঠিক ভাবে করতে
পারলে বীর, আর করতে গিয়ে ধরা পড়লে মৃত্যু ঝুঁকি, জেল জরিমানাসহ নানাবিধ
খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় ।
রোজিনার বর্তমান অবস্থান হচ্ছে,
তথ্য সংগ্রহে তিনি চৌকষ ও পারদর্শীতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন। সুতরাং তাকে
কিছু সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে।
রোজিনাকে আটক ও তার বিরুদ্ধে মামলা
দায়েরের জন্য সাংবাদিক সমাজ আন্দোলন করছেন। তারা প্রমাণ করতে চেষ্টা করছেন,
রোজিনাকে আটক ও মামলা দায়েরের মাধ্যমে দেশে সংবাদ মিডিয়ার গলা টিপে ধরার
চেষ্টা চলছে। বিষয়টি হয়তো সেভাবে নয়, উভয় পরে অপরিপ পদেেপর ফসল। সমস্ত
পৃথিবীতে তথ্য অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকেরা প্রতিনিয়ত হয়রানির সম্মুখীন
হচ্ছেন। আবার তথ্য উৎঘাটন করে জনসন্মুখে তুলে ধরতে পারলে বীরের মর্যাদা
পাচ্ছেন। আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকের হয়রানির বহু
ঘটনা রয়েছে। আবার তাদের প্রতিবেন প্রকাশের পর অনেক রাষ্ট্র নায়ককে
রাষ্ট্রীয় মতা ছাড়তে হয়েছে।
প্রথম আলোর সম্পাদক ও মালিক প সংশ্লিষ্ট
ঘটনাটি নিরসনে প্রথম থেকে কোন উদ্যোগ নেওয়ার খবর কোন মিডিয়া প্রচার করেনি।
প্রথম আলো সম্পাদক কিংবা উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা ঘটনাটি শুনার পর দৌড়ে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলে যেতে পারতেন। সেখানে গিয়ে স্বাস্থ্য সচিব ও
মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে প্রাথমিক পর্যায়ে বিষয়টি শেষ করতে পারতেন। কিন্তু
সিনিয়র কেউ গিয়ে মন্ত্রী ও সচিবের সাথে আলোচনার করেছেন কিংবা করতে
চেযেছিলেন সেরকম কোন সংবাদ কোন মিডিয়া প্রচার করেনি। সংবাদ কর্মীদের সহজে
কেউ ঘাটাতে চায় না, আমার বিশ্বাস প্রথম আলো কর্তৃপ প্রথমে মন্ত্রণালয়ে
গিয়ে, বিষয়টি হ্যান্ডেল করলে ঘটনা এতোদূর গড়াতো না। তাই এখানে প্রথম আলো
কর্তৃপরে গৃহীত পদপে নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়?
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি নাবালকের মতো করেছে। রোজিনাকে নথি ফটোকপি করার সময়
হাতে নাতে ধরার পর, প্রথম আলো কর্তৃপকে খবর দিতে পারতেন এবং তারা আসার পর
সমস্ত বিষয়টি তুলে ধরে রোজিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে
পারতেন। প্রথম আলো কর্তৃপ না আসলে তার কার্ড বাতিল করতে পারতেন এবং
প্রয়োজনে মামলাও করতে পারতেন। তখন কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারতো না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব বিষয়টি দতার সাথে হ্যান্ডেল করলে
সরকারকে এধরনের বেকায়দায় পড়তে হতো না।
অন্যদিকে, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে
সমগ্র বিষয়ের সাথে ভূরাজনীতিসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোন চক্রের
সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। আমরা খোলা চোখে রোজিনা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে
দেখছি। এর পেছনে কোন কালো বিড়াল আছে কিনা বিজ্ঞজনদের ভেবে দেখা উচিৎ। তাই
ফ্রান্সের সেই বিচারকের মতো বলবো, "সংশ্লিষ্ট মহিলাটিকে খুঁজুন"।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব।