ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লায় আগমনের শতবর্ষ পূর্তি জাতীয় কবির ১২২ তম জন্মবার্ষিকী আজ
Published : Tuesday, 25 May, 2021 at 12:00 AM, Update: 25.05.2021 12:42:09 AM
কুমিল্লায় আগমনের শতবর্ষ পূর্তি জাতীয় কবির ১২২ তম জন্মবার্ষিকী আজনিজস্ব প্রতিবেদক: ১১ জ্যৈষ্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২ তম জন্মবার্ষিকী। এ বছরই কবির কুমিল্লায় আগমনের শতবর্ষ পূর্তি হয়েছে এবছর। ১৯২১ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো কুমিল্লায় এসেছিলেন প্রেম ও দ্রোহের কবির নজরুল। কবির কুমিল্লা-আগমনের মাহেন্দ্রক্ষণকে রাঙ্গিয়ে দিতে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিলো কুমিল্লায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে স্থগিত করা হয়েছে সব আয়োজন। তবে ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্যে কুমিল্লায় পালিত হবে জাতীয় কবির ১২২তম জন্মবার্ষিকী।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবনের সোনালী সময়গুলো কাটিয়েছেন কুমিল্লায়। প্রেম, বিয়ে, ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কবিতা-গান গেয়ে মিছিল,কুমিল্লা কারাগারে কারাবরনের মধ্যদিয়ে স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে রয়েছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবি নজরুলের জীবন ও কর্মের মধ্যদিয়ে কুমিল্লা এক তাৎপর্যপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কবি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলি কাটিয়েছেন কুমিল্লায়।
১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত কবি কুমিল্লায় আসেন ৫ বার। ৫ বারে কবি ১১ মাসের বেশী সময় কাটান কুমিল্লা শহর ও কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে। শহরে কিছুদিন থাকার পর কবি বিশিষ্ট পুস্তক ব্যবসায়ী আলী আকবর খানের বাড়ী মুরাদনগরের দৌলতপুরে চলে আসেন। ১৯২১ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কলকাতা থেকে পুস্তক ব্যবসায়ী আলী আকবর খাঁ সঙ্গে শিয়ালদহ হয়ে আকস্মিক ভাবে কুমিল্লার মুরাদনগর থানার দৌলতপুর গ্রামের খাঁ বাড়িতে আসেন নজরুল। এই বাড়ীতে থাকার সুবাদে পাশের বাড়ীর  আলী আকবর খাঁ র ভাগ্নি সৈয়দা নার্গিস আশার খানম এর সাথে নজরুলের পরিচয় হয় এবং দু’জনে গভীর প্রেমে মগ্ন হন। দৌলতপুরের এই বাড়িতে নজরুল একটি আমগাছের তলায় দুপুরে শীতল পার্টিতে বসে তিনি কবিতা ও গান রচনা করতেন। এখানে কবি খাঁ বাড়ীর ও গ্রামের ছেলে মেয়েদেরকে নাচ,গান,বাদ্য শেখাতেন। এই আমগাছের পাশেই ছিল কামরাঙ্গা কামিনী কাঠাঁল গাছের সারি। এই আমগাছের পাশ্বর্বতী পুকুরেই নজরুল ঘন্টার পর ঘন্টা সাতার কাটতেন। কবি আমতলায় রাত দুপুরে মনভুলালো উদাস সুরে বাঁশি বাজাতেন। পাপড়ি খোলা কবিতাটি এই গাছতলায় রচনা করেন। নজরুল বাংলা ১৩২৮ সালের ৩রা আষাঢ় ১ম বিয়ে হয় দৌলতপুরের সৈয়দা নার্গিস আশার খানমের সঙ্গে। নজরুল ও নার্গিসের বাসর ঘরের খাট ও বিছানা,২টি বালিশ,কম্বল এখনও আছে। কিন্তু বিয়ের রাতেই বাসর ঘর থেকে নজরুল বের হয়ে যান নার্গিসকে একা ফেলে এবং ঐ রাতেই তিনি মুরাদনগরের দৌলতপুর ত্যাগ করেন। এরপর তিনি কখনো দৌলতপুরে ফিরে যাননি। দৌলতপুর ত্যাগ করার সময় নজরুল লিখেগেছেন ‘‘ আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো তবু আমারে দেবনা ভুলিতে। দৌলতপুরে কবি নজরুলের ৪টি স্মৃতি ফলক রয়েছে।  
১৯২১ থেকে ১৯২৩ সালের বিভিন্ন সময়ে নজরুল অবস্থান করেন কুমিল্লা  শহরের কুমিলা কান্দির পাড়ের ইন্দ্র কুমার সেনের বাড়ীতে। বাড়ীটি বর্তমানে কয়েক হাত বদল হয়ে বাড়ীটির বর্তমান নাম গুলশান ভিলা। এই বাড়ীতে ইন্দ্র কুমার সেনের ভ্রাতুস্পুত্রী আশালতা সেন গুপ্তা দুলী বা প্রমিলা প্রেমে পড়েন নজরুল। পরে ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে নজরুল আশালতা সেন দুলীকে বিবাহ করেন। কান্দিরপাড়ের সেই বাড়ীকে কেন্দ্র করে সেই সড়কের বর্তমান নাম নজরুল এভিনিউ।
কুমিল্লায় সংগীত চর্চায় নজরুল  কুমিল্লা শহরের দারোগাবাড়ীর মাজার সংলগ্ন একটি প্রাচীন বাড়ীতে নজরুল ১৯২১-২৩ সাল পর্যন্ত গানের মজলিসে যোগ দিতেন। ওস্তাদ মোঃ হোসেন খসরুসহ এই স্থানে অনেকদিন অনেক গান গেয়েছেন কবি নজরুল। তাছাড়া শহরের ২য় মুরাদপুর মুরগীর খামার অফিসের পেছনে মহারাজ কুমার নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বর্মন বাহাদুরের রাজবাড়ীতে ১৯২২ সালে অনেকদিন নজরুল কুমার শচীন্দ্র দেব বর্মনের সঙ্গে বসিয়ে সঙ্গীতচর্চা করতেন।
শহরের মুরাদপুরের বিখ্যাত তবলা বাদক জানু মিয়ার বাড়িতে নজরুল গানের আসরে বসতেন। নজরুল কুমিল্লায় থাকাকালিন সময়ে (১৯২১-২৩) কুমিল্লার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন রানীর দিঘীর পশ্চিমপাড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে বসে প্রতিদিন কলেজ পড়ুয়া তরুনদের নিয়ে কবিতা-গানের আসর জমাতেন।
১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর কুমিল্লার ঝাউতলা রাস্তা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বিখ্যাত কোরাস গান জাগরণী যা রচিত হয়েছিল ইংল্যান্ডর যুবরাজ প্রিস অব ওয়েল্স এর  আগমনের প্রতিবাদে সেটি তিনি গলায় হারমোনিয়াম বেধে কুমিল্লা শহরের পথে পথে ঘুরে ঘুরে গাইলেন-
                   ভিক্ষা দাও ! - ভিক্ষা দাও !
                    ফিরে চাও ওগো পুরবাসী,
                     সন্তান তারে উপবাসী,
                   দাও মানবতা ভিক্ষা দাও !
এই গান গাইতে গিয়ে মোগলটুলী হয়ে শহরের রাজগঞ্জ এলাকায় নজরুল মিছিল চলাকালে গ্রেফতার হন।