মাসুদ আলম।।
করোনাভাইরাস
সংক্রমণ এড়াতে কুমিল্লাসহ সারাদেশ জুড়ে ছিলো কড়াকড়ি অবস্থা। সরকার ঘোষিত
টানা ৪ সপ্তাহ জুড়ে চলা কঠোর লকডাউনে বন্ধ ছিলো লঞ্চ, ট্রেন ও আন্তঃজেলা
গণপরিবহনও। অন্যান্য কার্যক্রমেও ছিলো বিধিনিষেধ। কিন্তু সেই অবস্থায়ও থেমে
ছিলো না মাদক পরিবহন। বয়ে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিশাল একটি অংশ
কুমিল্লা জুড়ে। কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা এবং চট্টগ্রাম
হয়ে কক্সবাজার থেকে আসা মাদকদ্রব্য বিভিন্ন পন্থায় মহাসড়কের উপর দিয়ে
আনা-নেয়া চলে প্রতিনিয়ত। এই মহাসড়ক ব্যবহার করে মাদক পাচার রোধে সক্রিয়
রয়েছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবুও
দেখা যায় জরুরি পণ্য পরিবহনের আড়ালে কয়েক ধাপে খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে
তা পৌঁছে দেন ক্রেতা অর্থাৎ মাদকসেবীদের হাতে। লকডাউনে হোম ডেলিভারিও
হয়েছিলো মাদকের। অর্থাৎ করোনাকালে সব কিছু থমকে গেলেও মাদকের রমরমা কারবার ও
পাচার থেমে থাকেনি।
গত মার্চ, এপ্রিল ও চলতি মে মাসে কুমিল্লা জেলা
পুলিশ, র্যাব এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে
ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ মাদকদ্রব্যের বড় বড় চালান ধরে। কাঁচামালের
আড়ালে, পিকআপ ভ্যানের পাটাতনে, পাকস্থলীতে লুকিয়ে এমনকি পণ্যবাহী পরিহনের
ইঞ্জিনের ভেতরেও পাচারকালে লাখ লাখ ইয়াবা জব্দ করা হয়। গ্রেফতারও করা হয়েছে
মাদক কারবারিদের। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযানের
মাধ্যমে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করতে তারা বদ্ধপরিকর। তাদের অভিযান মাদকের
বিরুদ্ধে অব্যাহত রয়েছে।
কুমিল্লা জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্য
অনুসারে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে কুমিল্লা জেলা পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাদকের চোরাচালান ও পাচারের বিরুদ্ধে ২৩০টি অভিযান
পরিচালনা করেন কোটি কোটি টারা মাদকদ্রব্য আটক ও জব্দ করেছেন। এছাড়াও চলতি
মে মাসেও এই ধরণের অভিযানে নিয়মিত মাদকদ্রব্য উদ্ধারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের
আটক করা হচ্ছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (২১ মে) রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম
মহাসড়ক দিয়ে ফেন্সিডিল ও বিদেশী মদ পাচারকালে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার
আমতলী বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫০ বোতল ফেন্সিডিল ও ০২ বোতল বিদেশী
মদসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে র্যাব। অভিযানে মাদক পরিবহনের কাজে
ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়।
এর আগে গত ১০ মে মধ্যরাতে আমতলী
বিশ্বরোড এলাকার একই স্থানে অভিযান চালিয়ে ২০০ বোতল ফেন্সিডিল ও ৮০০ পিস
ইয়াবাসহ একজন মাদক ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে র্যাব। এই অভিযানেও
মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়।
এছাড়াও গত
পয়লা মে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের দক্ষিণ গ্রাম বাজার ও সদর উপজেলার আমতলী
বিশ্বোরোড এলাকায় র্যাবের পৃথক অভিযানে দক্ষিণ গ্রাম বাজার এলাকা ৪ হাজার
৮৮০ পিস ইয়াবা ও ৬ বোতল হুইসকি এবং আমতলী বিশ্বোরোড এলাকা থেকে ১৫ হাজার
পিস ইয়াবাসহ মোট তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে র্যব। আমতলী
বিশ্বোরোড এলাকা থেকে ১৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার চালানটি কক্সবাজার থেকে
পিকআপ যোগে ঢাকায় পাচার করছিলো।
এছাড়া জেলা পুলিশের নিয়মিত অভিযানে
প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও গাাঁজাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের
মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছেন। এরমধ্যে চলতি মাসের পয়লা মে স্কুল বেগে লুকিয়ে
গাঁজা পাচারকালে চৌদ্দগ্রামে এক যুবককে আটক করা হয়। ৩ মে কুমিল্লা সদর
উপজেলার আমড়াতলী এলাকায় র্যাটারি চালিত অটোরিকশায় লুকিয়ে গাঁজা পাচারকালে
দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করে কুমিল্লা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি। গত
৭ মে কুমিল্লার ছোটরা, তেলিকোনা ও মনোহরপুর এলাকায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ
ডিবির পৃথক অভিযানে তিন হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার মাদকদ্রব্য
উদ্ধার করা হয়। গত ১০ মে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় পুলিশের পৃথক ০৪টি
অভিযানে গাঁজা, ফেন্সিডিল ও স্কাপ সিরাপসহ মহিলা মাদক চার নারী ও তিন
পুরুষসহ ৭ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ গত ২২ মে শনিবার
কুমিল্লার সদর উপজেলার গাবতলি গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই হাজার পিস ইয়াবা
ট্যাবলেটসহ এক যুবকে আটক করে পুলিশ। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই পুশিশের
এধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে প্রতিদিন পুলিশ, র্যাব ও
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদক নিয়ে আটক, গ্রেফতারের পরও কিছুতেই যেন
ক্ষান্ত হচ্ছেনা কুমিল্লার মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক বিরোধী অভিযানে গত দুবছরে
অর্ধশতাধিক, মাদক কারবারি নিহত হলেও নির্মূল করা সম্ভব হয়নি মাদক ব্যবসা।
ভারত সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায়, দেশে মাদক প্রবেশের একটি প্রধান ট্রানজিট
পয়েন্ট এ জেলাটি। সম্প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকা ও মাদকের আখড়া হিসেবে
চিহ্নিত,এলাকা গুলোতে ফের সক্রিয় হচ্ছে মাদক কারবারিরা।
প্রতিদিনই
সীমান্তের বিভিন্ন অরক্ষিত এলাকা দিয়ে দেদারছে প্রবেশ করছে ভারতীয় ইয়াবা,
গাজা, মদ, ফেন্সিডিল, বিয়ার, স্কার্ফ সহ নানা জাতের মাদক। একসময় শুধু
মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এলেও এখন চোরাই পথে ইয়াবা আসছে ভারত থেকে।
কুমিল্লা
র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব
বলেন, ঝুঁকি থাকার পরও খুব সহজে এবং বেশি টাকা ইনকামের জন্য কিছু অসৎ
ব্যক্তি মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ে। একবার কেউ জড়িয়ে পড়লে জেলে যাওয়ার পরও একই
ব্যক্তি বের হয়ে এসে আবারও মাদক কারবারে নেমে পড়ে। অন্যদিকে করোনায় অনেকের
আয় কমে গেছে, সে কারণে তারা মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনিও আরও বলেন,
মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। মাদক পাচারে ব্যবসায়ীরা যত অভিনব
কায়দা অবলম্বন করুক না কেন র্যাবের চোখ ফাঁকি দিতে কষ্ট হবে। প্রতিদিনই
আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।