মন্ত্রীর পিএস-সচিব পরিচয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন তারা
Published : Wednesday, 26 May, 2021 at 12:00 AM
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচয় দিয়ে জামালপুরে উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানাকে ফোন করেন এক ব্যক্তি। তাকে ফোন করে বলা হয়- কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের শ্যালিকার জরুরি ভিত্তিতে ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাকে যেন তিনি (জাকিয়া সুলতানা) ২৫ হাজার টাকা ওই নম্বরের নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠান।
বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয় জাকিয়া সুলতানার। তিনি পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলকে বিষয়টি জানান। তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত সচিব ওই নম্বরে টাকা পাঠাতে নিষেধ করেন।
এই ঘটনার পরে একই পরিচয়ে শেরপুর জেলার উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে ও ময়মনসিংহ জেলার উপ-পরিচালক ড. মো. রেজাউল করিম কাছেও ফোন করা করা হয়। তাদের কাছেও একইভাবে ২৫ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। তাদের কাছেও বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তারা বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অথিরিক্ত সচিবকে জানান।
পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সোহেল ইসলাম রানা ও শাকিল ইসলাম নামের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণারকাজে ছয়টি মোবাইল ফোন ও ১১টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার প্রতারক চক্রের প্রধান সোহেল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে প্রতারণা, মাদক, মারামারি, নারী নির্যাতন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার রানা এক সময় মন্ত্রীর পিএস, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি নিজের সামাজিক অবস্থান প্রকাশ ও প্রতারণার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন। এছাড়াও প্রতারক রানা সংসদ সদস্যদের গাড়ীর ব্যবহৃত স্টিকার তার নিজের গাড়িতে ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন।
গাড়িতে ‘সংসদ সদস্য’ লেখা স্টিকার ব্যবহার করার অপরাধে ২০১৫ সালে রাজধানীর সালে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার প্রতারক রানার সহযোগী শাকিল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এই প্রতারককে গ্রেফতারের পর দেখা যায় বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে তার অনেক ছবি। তার প্রতারণার অন্যতম একটি কাজ হলো ছবি তোলা। এই সকল ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিল। গ্রেফতার প্রতারক সচিবের গলার কণ্ঠস্বর নকল করে প্রতারণা করছিল।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল ব্যবহার করে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা করে। এ ধরণের প্রতারণার বিষয়ে যাচাই করতে চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা সহযোগীতা করব।