জলবায়ু
পরিবর্তনের তিকর প্রভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বেশি করে গলছে মেরু অঞ্চলের
বরফ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। তলিয়ে যাচ্ছে বহু দেশের উপকূলীয়
নিম্নাঞ্চল। আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। বন্যা, ঝড়ঝঞ্ঝা,
জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তীব্রতা—দুটিই বাড়ছে। ক্রমেই বেশি করে মানুষ জলবায়ু
উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নানা রকম রোগব্যাধি, মহামারি। আর
এসব য়তির প্রধান শিকার বাংলাদেশসহ বেশ কিছু নিম্ন আয়ের দেশ, যে দেশগুলো
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয় বললেই চলে। সংগত কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা এই সংকটের টেকসই ও প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানে কমনওয়েলথকে অগ্রণী ভূমিকা
নেওয়ার আহ্বান জানান। সোমবার প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ
আহৃত ‘এশিয়া রিজিওনাল কমনওয়েলথ হেডস অব গভর্নমেন্ট’-এর গোলটেবিল আলোচনায়
গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন,
‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে কমনওয়েলথ সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ও
প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের েেত্র অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।’
কমনওয়েলথের
সদস্য এবং সিভিএফের (জলবায়ু তিগ্রস্ত ফোরাম) চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ হাসিনা
ঝুঁকির বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করার জন্য পরবর্তী বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন
বা কপ-২৬-এর আগেই কয়েকটি পদপে গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এ সময়
প্রধানমন্ত্রী তিন দফা প্রস্তাব রেখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে—এক. বিশ্বব্যাপী
সবুজ এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ল্েয বৃত্তাকার অর্থনীতিতে বিনিয়োগ
বাড়ানো। দুই. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতি বিশেষ
মনোযোগ দেওয়া এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি
হস্তান্তর এবং তিন. ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে প্রশমন কার্যক্রম গ্রহণের েেত্র
জলবায়ু তহবিলের মাধ্যমে পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান। জলবায়ু পরিবর্তনের তিকর
প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদপে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
প্রতিবছর টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ
থেকে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করি। ৩০ কোটি বৃরোপণ এবং কম
কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘মুজিব কাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’
প্রণয়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনার আওতায় ২০৪১ সাল নাগাদ
বাংলাদেশ হবে কম কার্বন নিঃসরণকারী এবং ৪০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি
উৎপাদনকারী একটি দেশ।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কতটা ঝুঁকিতে
রয়েছে, তা উঠে এসেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায়।
বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে
২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ বা ১৩ কোটির বেশি মানুষের
জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে নেমে যাবে। সিভিএফভুক্ত অন্যান্য দেশেরও অবস্থা
খুবই খারাপ। কোনো কোনো দেশে বসবাস উপযোগিতা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায়
ঐক্যবদ্ধ বৈশ্বিক প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। প্যারিস সম্মেলনে ১০০ কোটি
ডলারের তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী
যথার্থই বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কমনওয়েলথ অগ্রণী
ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরাও একই প্রত্যাশা করি।