বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভারত মহাসাগর দ্রুত উষ্ণ হয়ে ওঠায় ভারতের ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম আরও তীব্র হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির গতি বাড়াচ্ছে। আর তাতেই বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ, দুর্বল ঝড়গুলো জোরালো হয়ে উঠছে। আর এসবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত কয়েক দিনের ব্যবধানে ভারতে আঘাত হেনেছে দুইটি মারাত্মক তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিজঢ় তকতের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয় আরেক ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এই ঝড়ের জেরে ভারতের দশ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তুলনামূলক বেশি উষ্ণ পানিতে তীব্র হয়ে ওঠে ঘূর্ণিঝড়। পশ্চিম ভারত সাগরের অংশ হিসেবে আরব সাগর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সাধারণত ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। এই তাপমাত্রায় ১৮৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই সাগরে মাত্র ৯৩টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এই তুলনায় আরেকটু উষ্ণ সাগর ভারত মহাসাগরের পূর্বে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের স্থায়ী তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। সেখানে একই সময়ের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ৩৫০টিরও বেশি ঘূর্ণিঝড়।
২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আরব সাগরে তৈরি হয়েছে ২৮টি ঘূর্ণিঝড়। এই সময়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছেছে। ২০১৬ সালে এক নেচার স্টাডিতে দেখা যায় বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর তীব্রতা মারাত্মক বেড়েছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটেরোলোজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিও কোল বলেন, ‘আটলান্টিক কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের তুলনায় পুরো ভারত মহাসাগর দ্রুত হারে উষ্ণ হচ্ছে। আর ভারত মহাসাগরের মধ্যে এর পশ্চিম অংশ আরও বেশি উষ্ণ হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি এর (সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি) কারণে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতায় পরিবর্তন এবং আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং দ্রুত তীব্র হয়ে উঠছে।’
বিগত কয়েক বছরে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে দুর্বল ঝড়গুলোকে মারাত্মক তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে দেখা গেছে। জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিও কোল বলেন, ‘জলবায়ু পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে আরব সাগর আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে উষ্ণ হচ্ছে আর সেকারণে ভবিষ্যতে আরব সাগরে আরও মারাত্মক তীব্র ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে।’