মিয়ানমার
থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রায় চার বছর ধরে
বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে
চুক্তি হলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গারও প্রত্যাবাসন হয়নি। রোহিঙ্গাদের
প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে বাস্তবে কিছুই করছে না মিয়ানমার; এমনকি
জাতিসংঘকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও মানছে না দেশটি। এর মধ্যে মিয়ানমারে ঘটে গেছে
সামরিক অভ্যুত্থান। জান্তাপ্রধান রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সব
সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম
অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাবাসন
প্রসঙ্গে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার সকালে গণভবনে জাতিসংঘ
সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি ভোলকান বোজকিরের সঙ্গে
সৌজন্য সাাৎকালে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় ভোলকান বোজকির এক
মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে,
তার প্রশংসা করেন।
প্রাকৃতিক পরিবেশের দিক থেকে সবচেয়ে সমৃদ্ধ একটি
অঞ্চল ছিল কক্সবাজার। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময় ধরে আশ্রয় দেওয়ায়
সেই পরিবেশ আজ ধ্বংসপ্রায়। স্থানীয় জনজীবনেও নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। এই
অবস্থায় সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়, যদিও
এখন পর্যন্ত মাত্র ১৮ হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য যেসব আয়োজন করা হয়েছে এবং সেখানে
ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বোজকির
তারও প্রশংসা করেন। মঙ্গলবার দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ
সম্মেলনে ভোলকান বোজকির বলেন, সংকটের সময়ে উদ্বাস্তুদের কিভাবে সহযোগিতা
করতে হয়, ভাসানচর তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক প্রশ্নের জবাবে বোজকির
স্বীকার করেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তি
রয়েছে। একটি গ্রুপ হচ্ছে আসিয়ান গ্রুপ এবং আরেকটি কোর গ্রুপ। তিনি বলেন,
কোর গ্রুপের বিপরীতে আসিয়ান গ্রুপ মনে করে, মিয়ানমার সরকারকে স্বীকৃতি না
দেওয়া এবং এখনই চাপ প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের
প্রত্যাবাসন আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে
বাংলাদেশকে অনেক বেশি সক্রিয় হতে হবে। আসিয়ান জোটের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ
বাড়াতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা শুধু নয়, কয়েক দশক
ধরে আসা আরো অনেক রোহিঙ্গাই বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তারা এখন বাংলাদেশের
সমাজে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সঠিক
সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে হবে। দ্রুত প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করতে হবে। তার আগে
পর্যন্ত তাদের কোথায় রাখা হবে, কিভাবে দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা
যাবে, সেসব ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদপে নিতে হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজারের
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান রায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে।